Logo

সাতক্ষীরা-৩ আসনে প্রার্থী নির্বাচনে বিপাকে বিএনপি: মাঠ দখলে বঞ্চিত ডা. শহিদুলের অনুসারীরা

profile picture
জেলা প্রতিনিধি
১১ নভেম্বর, ২০২৫, ১৬:৩২
42Shares
সাতক্ষীরা-৩ আসনে প্রার্থী নির্বাচনে বিপাকে বিএনপি: মাঠ দখলে বঞ্চিত ডা. শহিদুলের অনুসারীরা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন আসনে দলের অভ্যন্তরে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গত ৩ নভেম্বর রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপি ২৩৭টি আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন ঘোষণা করে।

বিজ্ঞাপন

এরপর থেকেই অন্তত ৩০টি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের অনুসারীরা সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, এমনকি হরতালের কর্মসূচিও পালন করে আসছেন।

সাতক্ষীরা-৩ (কালিগঞ্জ–আশাশুনি) আসনেও দেখা দিয়েছে একই চিত্র। এখানে ‘গরিবের ডাক্তার’ খ্যাত ডা. শহিদুল আলমকে বাদ দিয়ে কাজী আলাউদ্দীনকে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ঘোষণার রাতেই ডা. শহিদুলের সমর্থকরা কালিগঞ্জে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে মশাল মিছিল করেন এবং কাজী আলাউদ্দীনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেন। এরপর টানা কয়েকদিন ধরে কালিগঞ্জ ও আশাশুনি এলাকায় অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ড্যাবের নেতা ডা. শহিদুল আলম গত ১৫ বছর ধরে এ অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতির নেতৃত্বে রয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। অন্যদিকে, কাজী আলাউদ্দীন ২০০১ সালে ন্যাপ থেকে বিএনপিতে যোগ দেন এবং সে বছরই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে নতুন সীমানা নির্ধারণের ফলে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ঘাঁটির একটি অংশ অন্য আসনে চলে যায়। ফলে বর্তমান সাতক্ষীরা-৩ আসনের অনেক ইউনিয়নে তার তেমন সাংগঠনিক ভিত্তি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বিজ্ঞাপন

কালিগঞ্জ ও আশাশুনির বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা কাজী আলাউদ্দীনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

কালিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সোহেল বলেন, “ডা. শহিদুল আলমের জনপ্রিয়তার কাছে কাজী আলাউদ্দীন কিছুই না। সাতক্ষীরায় এমন মানুষ নেই, যাকে তিনি ফ্রি চিকিৎসা দেননি। তার জনপ্রিয়তাই বিএনপির জয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে।”

স্থানীয় ভোটারদেরও মত প্রায় একই। কালিগঞ্জের কৃষক রহমত আলী বলেন, “আমরা শহিদুল আলমকেই ভোট দিতে চাই। তিনি গরিব মানুষের চিকিৎসা করেন, নিজের টাকায় ওষুধ দেন, যাতায়াতের খরচ দেন। যদি তিনি প্রার্থী না হন, আমরা ভোট কেন্দ্রে যাব না।”

বিজ্ঞাপন

জেলা বিএনপির সদস্য শেখ নুরুজ্জামান মনে করেন, এ আসনে জয়ের জন্য জনমতের প্রতিফলন জরুরি। তার ভাষায়, “ডা. শহিদুল আলমকে প্রার্থী না দিলে জামায়াতের প্রার্থী সহজেই জয়ী হতে পারে। কারণ এই আসনে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে ভুল মানেই পরাজয়।”

অন্যদিকে, মনোনয়ন পাওয়া কাজী আলাউদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি রাজপথে ছিলাম, দল আমাকে তাই মনোনয়ন দিয়েছে। আমি মাঠে কাজ করছি, প্রচারণা চালাচ্ছি। যারা আমার বিপক্ষে আছেন, তাদের সঙ্গে বসে কথা বলব।”

বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এ আসনে যদি কাজী আলাউদ্দীনের মনোনয়ন বহাল থাকে, তাহলে নিশ্চিত পরাজয় ঘটবে। ডা. শহিদুল আলম ছাড়া সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা নেই।”

বিজ্ঞাপন

ডা. শহিদুল আলম নিজেও বলেন, “আমি সব সময় দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, মানুষের পাশে ছিলাম। আশা করি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জনপ্রিয়তা যাচাই করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাতক্ষীরা-৩ আসন ঐতিহ্যগতভাবে জামায়াত-বিএনপির যৌথ ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। তাই এখানে প্রার্থী নির্বাচনে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে, ভোট বিভাজন হয়ে বিএনপির পরাজয়ের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

জেবি/আরএক্স
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD