সাজেকে হাসপাতাল নেই, জরুরি চিকিৎসার অভাবে ঝুঁকিতে হাজারো মানুষ

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় মানুষের মৌলিক চিকিৎসাসেবা আজও অবহেলিত রয়ে গেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সড়জমিনে দেখা যায়, সাজেক ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বসবাসকারী মানুষজন সাধারণ অসুস্থতা থেকে শুরু করে গুরুতর রোগ, দুর্ঘটনা কিংবা প্রসূতি সেবার জন্য ন্যূনতম চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জরুরি পরিস্থিতিতে রোগীদের দিঘীনালা উপজেলা সদর কিংবা খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। দীর্ঘ পথ, দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা এবং সীমিত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেক সময় রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অবস্থা মারাত্মক হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: রেললাইনের পাত তুলে ফেলায় অগ্নিবীনা ট্রেন লাইনচ্যুত

স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি রাস্তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। রাতের বেলা গুরুতর অসুস্থ রোগী পরিবহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় অকাল মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাজেক ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বলেন, রাতের বেলা কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক সময় বিনা চিকিৎসায় মানুষ মৃত্যুবরণ করতেও দেখা যায়। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও মানবিক সংকট।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, সাজেক একটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত পর্যটন এলাকা। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন। অথচ এখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য একটি হাসপাতাল নেই এটি দীর্ঘদিনের অবহেলারই প্রতিফলন। একটি হাসপাতাল হলে স্থানীয় মানুষ তো বটেই, পর্যটকরাও উপকৃত হবেন।

আরও পড়ুন: দীর্ঘ ৫ বছর পর বিএনপিতে ফিরল জানে আলম খোকা

এ বিষয়ে সাজেক ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পরিচয় চাকমা বলেন, সাজেকে একটি হাসপাতাল নির্মাণের দাবি বহুদিনের। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। দুর্গম এই অঞ্চলের মানুষের কথা বিবেচনা করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

তিনি আরও জানান, অন্তত একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশে কমবে। এতে মাতৃমৃত্যু, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এবং সাধারণ রোগে প্রাণহানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

উল্লেখ্য,,এলাকাবাসীর মতে, সাজেকে একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি হাসপাতাল স্থাপন করা হলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি পর্যটন ব্যবস্থাপনাও আরও নিরাপদ ও টেকসই হবে। দ্রুত হাসপাতাল নির্মাণে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন সাজেকের সর্বস্তরের মানুষ।

স্থানীয়দের কণ্ঠে এখন একটাই প্রত্যাশা পর্যটনের আড়ালে চাপা পড়ে থাকা মানবিক এই সংকট নিরসনে দ্রুত একটি স্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক, যাতে পাহাড়ের মানুষ নিরাপদ ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে।