পাকিস্তানে পেঁয়াজের কেজি ৩০০
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
আকাশছোঁয়া দাম বন্যা-বিধ্বস্ত পাকিস্তানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব খাদ্যদ্রব্যকে মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশটির মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশে পৌঁছায় জনজীবনে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে এসেছে। এই সংকট সামলাতে কর্তৃপক্ষ আরও কঠোর আর্থিক বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি গত পাঁচ দশকের মধ্যে এবারই প্রথম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ভয়াবহ সংকট এবং দ্রুততম মুদ্রাস্ফীতিতে ভুগছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় এক-তৃতীয়াংশ তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি।
বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের ইন্দুস নদীর পশ্চিম তীরের কাছের শহর দাদুতে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। চাল ও পেঁয়াজ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাদু। আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দা আলী আসগর লোনদার বলেন, বন্যার আগে সেখানে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫০ রুপি। এখন সেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।
শুধু পেঁয়াজই নয়, দেশটিতে আলু, টমেটো, ঘির দামও আকাশচুম্বী হয়েছে। লোনদার বলেছেন, আলুর দাম চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি কেজি ১০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর দাম বেড়েছে ৩০০ শতাংশের বেশি। দেশটির বাজারে এখন প্রতি কেজি টমেটোর দাম ৪০০ রুপি। এছাড়া ঘিয়ের দামও বেড়েছে ৪০০ শতাংশের বেশি। খাদ্যসামগ্রী মজুতের গুদাম প্লাবিত হওয়ায় দুধ ও মাংসের সরবরাহও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যায় দেশটিতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় এক হাজার ৩০০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও প্রায় ৫ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় শিবিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বন্যায় আবাদি কৃষি জমির বিশাল অংশ ডুবে গেছে। দেশটির অর্থনীতিতে কৃষির অবদান প্রায় এক পঞ্চমাংশ হলেও এবারের বন্যায় তা ব্যাপক সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশটির বেসরকারি সংস্থা ইসমাইল ইকবাল সিকিউরিটিজ প্রাইভেটের গবেষণা প্রধান ফাহাদ রউফ বলেছেন, আগামী দুই মাসে মুদ্রাস্ফীতি ৩০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে; যা এই অর্থবছরের গড় মূল্যবৃদ্ধিকে ২৩ থেকে ২৪ শতাংশে নিয়ে যাবে। যদিও এর আগে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যবৃদ্ধি ১৮ থেকে ২০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাষ দিয়েছে।
গত এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এখনও দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয়। অবাধ নির্বাচনের দাবিতে দেশটির বর্তমান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে দেশজুড়ে জোরেসোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে, বিপর্যয়কর বন্যা জনগণের ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ
আরএইচ/