ঘুরে আসুন ‘সেভেন সিস্টারস’ থেকে


Janobani

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, ১১ই অক্টোবর ২০২২


ঘুরে আসুন ‘সেভেন সিস্টারস’ থেকে
ছবি: জনবাণী

আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল-কে ‘সেভেন সিস্টারস’ বলা হয়। তন্মধ্যে নাগাল্যান্ড অন্যতম। এর প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে সবুজের গালিচা। দূর থেকে হাতছানি দেয় বিস্ময়, অ্যাডভেঞ্চার আর উপজাতীয় সংস্কৃতি। দুর্গম পাহাড়ি পথ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অনাবিল। 


শান্তি ও নির্মলতার প্রতীক নাগাল্যান্ড। হিমালয়ের পাদদেশে উপজাতীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে লালিত ভারতের একটি সুন্দর রাজ্য। পৃথিবীজুড়ে নাগল্যান্ড যেন বিস্ময়। প্রতি বছর আগস্ট-অক্টোবরে নাগাল্যান্ডের জাটিঙ্গা গ্রামে বৈরি আবহাওয়ায় পাখিদের স্বেচ্ছামৃত্যু ঘটে। যদিও পাখিদের এই আত্মাহুতির বিষয়টিকে নাগারা ঈশ্বরের দান বলে মনে করে! নাগাল্যান্ডের ১৬টি আদিবাসী গোষ্ঠীর সংস্কৃতির মেলবন্ধনে প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয় ‘হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল’। ২০০০ সালে উৎসবটি শুরু হয়েছিল। ‘হর্নবিল পাখি’, সমগ্র নাগাল্যান্ডে খুব জনপ্রিয় উৎসব। আদিবাসী লোকগাথা জুড়ে রয়েছে এই পাখি উৎসবের। নাচ-গান ছাড়াও এই উৎসবের বাড়তি পাওয়া আদিবাসীদের হস্তশিল্প এবং নানান বিচিত্র খাবারের আয়োজন।


দর্শনীয় স্থানসমূহ

নাগাল্যান্ড এর আকর্ষণ তার প্রাকৃতিক অসাধারণ সৌন্দর্য। বেশিরভাগ পর্যটক এখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আসেন। খোনোমা গেট ব্রিটিশদের ইতিহাসের সাক্ষী। খোনোমা আদিবাসীরা ব্রিটিশদের আক্রমণ থেকে গ্রাম সুরক্ষিত রাখতে এ দরজা নির্মাণ করেছিল।


জুকোভ্যালি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত যা নাগাল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী কোহিমা থেকে দক্ষিণে ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত। একে অনেকেই ভালবেসে ফুলের উপত্যকা বলে অভিহিত করেছেন। বর্ষাকালে এটি দেখতে অসাধারন লাগে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস নিঃসন্দেহে জুকৌ উপত্যকা পরিদর্শনের সেরা সময়।


এখানকার ট্রেকিং বিশ্বজুড়ে সেরা, প্রাকৃতিক গুহা, পাহাড়, নদনদী পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এ ছাড়াও জাপফু চূড়ার উঁচু পাহাড়ি ঢাল ট্রেকিংয়ের জন্য আদর্শ।


চারুকলা, ইতিহাস, শিল্প, জাতিবিদ্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমাহার নাগাল্যান্ড মিউজিয়াম। রয়েছে তাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির বহু নিদর্শন।


নাগাল্যান্ডের ‘তুলি শহর’ তার অনন্য প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের প্রতীক। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মোককচং জেলার তুলি শহরের নির্মল পারিপার্শ্বিক তার শান্তি ও সতেজতা দর্শনার্থীদের মন প্রফুল্ল করে তোলে।


নাগানিমোরা এই অঞ্চলে উপজাতীয় রোমাঞ্চকর খেলা আর ঐতিহ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে সহজেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আশীর্বাদপ্রাপ্ত নাগানিমোরা সত্যিই প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন।


চাংতংগ্যা, মেলুরি, চুচুয়িমলাং এবং পঙ্গো গ্রাম আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। স্থানটি পাখিদের অভয়ারণ্য। তা ছাড়া ফকিম এবং ইন্টাকি অভয়ারণ্য রাজ্যের অন্যতম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।


অদ্ভুত মায়াময় রাজ্য আর বিচিত্র সংস্কৃতিতে গাঁথা নাগা জনগোষ্ঠীর দেশ নাগাল্যান্ড। সারা বছরই নাগাল্যান্ড ভ্রমণ করা যায়। তবে,   মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভালো সময়। ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি বেশ ঠাণ্ডা পড়ে এখানে।


ঢাকা থেকে কলকাতা কিংবা শিলং হয়ে গৌহাটি। গুয়াহটি থেকে নাগাল্যান্ড চার ঘণ্টার দূরত্ব। অথবা বিমানে কিংবা ট্রেনে ডিমাপুর। বাইরোডে গুয়াহটিতে ডিমাপুর এবং কোহিমার বহু বাস সার্ভিস রয়েছে।


আমরা কিশোরগঞ্জ থেকে গিয়েছিলাম ৫জন আগরতলা থেকে। আগরতলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা  এক্সপ্রেস দিয়ে প্রথমে  গিয়েছি লামডিং সময় লেগেছে প্রায় ১২ ঘন্টা তারপর শিলচর এক্সপ্রেস দিয়ে ডিমাপুর  সময় লেগেছে আরো ৪ ঘন্টা ডিমাপুর হলো নাগাল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর।


ওখানে হংকং মার্কেট খুবই জনপ্রিয় মার্কেট একদম স্টেশনের কাছে, সস্তায় খুব ভালোমানের প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায় এই মার্কেটে। যদিও আমাদের সময় হয়নি কেনাকাটার।  একরাত হোটেলে থেকে খুব সকালে সমো- গাড়ি দিয়ে চলে গেলাম নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা এ সময় লেগেছিল ৫ ঘন্টা।  


ডিমাপুর থেকে রাজধানী কহিমা যাওয়ার ৪ ল্যান্ডের রাস্তা প্রাকৃতিক পরিবেশ সুনশান নিরবতা  হর্ণছাড়া গাড়ি চলা মনে হচ্ছিলো এযেন এক ভিন্ন কোনো জগত। আমরা চলে গেলাম একবারে মেঘের ভিতর সে এক অন্য রকম অনুভূতি, একথায় মনোমুগ্ধকর। নাগাল্যান্ডে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার  জন্য রয়েছে প্রচুর পরিমানে হোটেল ও হোমস্টে।


নাগাল্যান্ডকে হস্তশিল্প আর কারুশিল্পের ঐতিহ্য বলা চলে। এখানকার কাষ্ঠ, বেত, বাঁশ ইত্যাদি তৈজসপত্র পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। বাঁশ ও বেতের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ঝুড়ি, ব্যাগ ও আসবাবপত্র এবং তুলা দিয়ে বোনা শাল ও জ্যাকেট পর্যটকদের নজর কাড়ে। রং, নকশা এবং অঙ্কনে রয়েছে নাগাদের চিরায়ত ঐতিহ্য। পণ্যগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ব্যবহার করে প্রাকৃতিক রঞ্জক, পুঁতি এবং শামুকের খোলস। এখানকার তাঁতশিল্প, কাষ্ঠখোদাই, মৃশিল্প, ধাতব শিল্প প্রভৃতিও বেশ জনপ্রিয়।


নাগাল্যান্ডবাসির জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় মাংসই বেশি, তারা মাংস খেতে ভালোবাসে মাংসের মধ্যে কুকুর, শুকর, হাঁস, মুরগী, গরু ছাগল ও বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় খেতে পছন্দ করে ওখানকার স্হানীয় বাসিন্দারা। তাছাড়া শাকসবজি ও ফলমুল পাওয়া যায় প্রচুর পরিমানে।


পাহাড়ি অঞ্চল হলেও আধুনিকতায় ভরপুর এই রাজ্য আমরা যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম ইউরোপের কোন দেশে।পরবর্তীতে থাকবে আমাদের মনিপুর ভ্রমণ নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন।


আরএক্স/