সংসারও অভিনয়ে সফল চৈতি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সংসারও অভিনয়ে সফল চৈতি

বাংলাদেশ মিডিয়া সেক্টরের মডেল অভিনেত্রী এবং উপস্থাপক  হিসেবে অতি পরিচিত একটি নাম ইসমত জেরিন চৈতি। 

সম্প্রতি এই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জনবাণীর প্রতিবেদককে বলেন, বিদেশ থেকে ফেরা সবসময় খুবই রোমাঞ্চকর! পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা, পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া এবং প্রিয় খাবার খাওয়া। কিন্তু বিরক্তিকর অনুভূতিও রয়েছে আবার। তিনি ১লা অক্টোবর নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন। তারপর থেকে তিনি অনেক নতুন প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত। সবেমাত্র একটি টিভি বিজ্ঞাপন শেষ হয়েছে এবং ছবি তোলা. কিছু টিভি শোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেগুলো খুব শীঘ্রই সম্প্রচারিত হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এবং কাজ উপভোগ করছেন।



ইসমাত জেরিন চৈতি বিয়ের পর অনেকটাই কমিয়ে দেন নাটক-চলচ্চিত্রের কাজ। স্বামীর সঙ্গে চলে যান নেপালে। তবে সেখানেও তিনি বসে ছিলেন না। ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর ডিপ্লোমা করেছেন। শো করেছেন। অভিনয় করেছেন। নেপালের হিমালয় টাইমস তাকে নিয়ে একটা বড় ইন্টারভিউ ছেপেছে।  ফ্যাশনউইক ২০১০ ডিজাইনার এবং বাংলাদেশী শো স্টপার হিসাবে এবং নেপালে তিনি কিছু বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং অনেক বাংলাদেশী সেলিব্রিটিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন (শাফিন আহমেদ, পার্থ বড়ুয়া, আলিফ আলাউদ্দিন, গায়ক রুপম, ইমি, ডিজে রাহাত ইত্যাদি)। এছাড়াও নেপালেবাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করেছেন। অনেক আন্তর্জাতিক ইভেন্টের আয়োজন করেছেন। ২০১৪/১৫ সময় তিনি কাঠমান্ডুতে কিছু নাটক ও টেলিফিল্ম করেন। অন্যদিকে  যখন বাংলাদেশে আসতেন তখন কিছু টিভি শো, ঈদের নাটক বা অন্য কোনো উৎসবে নাটক করতেন । চৈতি অন্যসব শিল্পীর মতো যখন-তখন যে কোনো কাজকরেন না। ভালো গল্প, চরিত্র পেলেই বেছে বেছে তিনি কাজ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি খুব অল্প কাজ করলেও দেশের বড় বড় ডিরেক্টরও আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী, নরেশ ভূঁইয়া, কৌশিক শঙ্কর দাশ এবং এ প্রজন্মেও বিইউ শুভ, মোহাম্মদ হোসেন জনিসহ আরো অনেক পরিচালকের সঙ্গেও আমি কাজ করেছি।



কবুতর, স্বপ্ন যখন, ডাক, বন্ধু ভালোবাসি, তুমি কি এখনো আমারনাটক ও টেলিফিল্মগুলোর আমার কাজের অন্যতম। অমিতাভ রেজার পরিচালনায় আমি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছি। যমুনা টেলিভিশনে আমি প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করছি। নাটকে আগের সেই মান নেই।

মানু ষইউটিউব ও বিদেশি সিরিয়ালের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন এবং আমরা কীভাবে আমাদের নাটকের সেই অতীতে ফিরে যাব- এমন সব নানাবিধ প্রশ্নেরউত্তরে চৈতি বলেন, মানুষ আগে যে কোনো কাজখুব যত্ন নিয়ে দরদের সঙ্গে করতো। জেনে, বুঝ- গুছিয়ে করতো। এখন মানুষ কাজের প্রতি তেমন সিরিয়াস না। তারা শুধু টাকার পেছনে দৌড়ায়। সবাই এখন বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। আগে মানুষ ভালোবাসা থেকে কাজ করতো, এখন তার উল্টো। তবে কাজ যে একেবারে হচ্ছেনা, তা নয়। হয়তোআগের তুলনায় কাজের মান কমে গেছে। দিন দিন মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে। মানুষ টিভির সামনে কম বসছে। তারাসবকিছু শর্টকাট চায়। এই শর্টকাটের জন্যমানুষ ইউটিউবকে বেছে নিচ্ছে। আমি এখানে আরেকটা কথা যোগ করতে চাই। আমরা নিজেরাই নিজেদের সম্মান দিতে জানি না। ভালো কাজ থেকে আমরা নিজেরাই দিন দিন সরে যাচ্ছি।

বর্তমানের ব্যস্ততা নিয়ে তিনি জানান, এখন বেশি ব্যস্ত আছি উপস্থাপনা নিয়ে। আমি নিয়মিত যমুনা টিভিতে লাক্স শোবিজ টুনাইট শো করি। ফটোশুট করছি। আমার ঘর-সংসার আছে, সেটা পুরোটাই আমাকে দেখতে হয়। তবে হ্যাঁ, ভালো কাজের অফার এলে, ভালো গল্প পেলে আমি অবশ্যই কাজ করব। আমিতো আগেই বলেছি, নেপাল-বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে আমার কাজ কমে গেছে। সংসারের জন্যই আমাকে অভিনয় জগত থেকে অনেকটা দূরে থাকতে হচ্ছে। অভিনয় জীবন, ব্যক্তি জীবন, নাটক ও ভালোলাগা, মন্দলাগা বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে চৈতি বলেন, একবার একটি নাটক নিয়ে আমরা নেপালে যাই। কিন্তু আমরা যেখানে শুটিং শুরু করি সেটা ছিল একটা পার্ক বা বড় বাগান।বাগান মালিকদের অনুমতি না নিয়েই আমরা শুটিং শুরু করি। বেশ কিছুটা শুটিং করার পর ওখানকার গার্ডবুঝতে পারল আমরা কিছু করছি। তো গার্ড তেড়েআসলেন এবং গার্ড আসার আগেই আমরা শুটিং স্পট থেকে কেটে পড়ি।



এটাওআমার জীবনের একটা মজার ঘটনা, যা আমি কখনোভুলব না। তিক্ত অভিজ্ঞতা তেমন নেই। তারপরও একটু বলি, নাম বলব না, আমাকে বলা হলো- আপনি নাটকের মূল নায়িকা। শুটিংয়ের জন্য আউটডোরে গেলাম। মেকআপ নেওয়ার পরে আমি বুঝতে পারি, আমি নাটকের মূল নায়িকা নই।

চৈতির কাছে আলোচনা-সমালোচনাসহ শেষবারের মতো কিছু জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রী মানেই এক ছাদের তলায়থাকা-খাওয়া ও ঘুমানো নয়; তাদের একসঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করে দিন পার করতে হবে। ভালোবাসাসহ সবকিছু সমানভাবে লেনদেন করতে হবে। এমনকি নিয়মিত তাদের একসঙ্গে এক্সারসাইজও করতে হবে। আলোচনা-সমালোচনায় আমি একদম নেই। আমি নীরবতা পছন্দ করি। তার মানে একাকীত্ব নয়। অনেক সময় আমি ইন্টারভিউগুলোও এড়িয়ে চলি। আমার কাজের ভুল নিয়ে কেউ সমালোচনা করলে আমার বেশ ভালো লাগে। আমি নতুন কিছু শিখতে পারি।

উল্লেখ্য,ইসমাত জেরিন চৈতি লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারে অংশনিয়েছিলেন ২০০৫ সালে এবং ৪র্থ স্থান অধিকার করেন। এর পরে তিনিকাজ করেছিলেন ইউনিলিভার, গ্রামীণফোন, স্কয়ার, আড়ং, হরলিক্স, শার্প হোস্ট এবং মডেল হিসাবে ফলক, গর্ব, ইত্যাদি।

এসএ/