রুশ-ইউক্রেনীয় দ্বন্দ্ব এবং যুদ্ধের ঐতিহাসিক পটভূমি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


রুশ-ইউক্রেনীয় দ্বন্দ্ব এবং যুদ্ধের ঐতিহাসিক পটভূমি

ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার সংঘাতের শুরুটা সোভিয়েত আমল থেকে, যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। তবে ২০১৪ সালে বিক্ষোভের মুখে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই সংকট আরও ঘনিভূত হয়।

পূর্ব ইউরোপের কিছু কমিউনিস্ট দেশ এবং সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মতো ইউক্রেনেও দুটি রাজনৈতিক ধারা রয়েছে। একটি অংশ চায় পশ্চিম ইউরোপের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে এবং নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য হতে। অপর অংশ রুশ প্রভাব বলয়ে থাকার পক্ষপাতী, কারণ ইউক্রেনের জনসংখ্যার বিরাট অংশই রুশ ভাষাভাষী। তারা জাতিগতভাবেও রুশ। রাশিয়ার সাথে তাদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক যোগাযোগ।

বিক্ষোভের মুখে ২০১৪ সালে ক্ষমতাচ্যূত ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপের সাথে তার সম্পর্ক বৃদ্ধি করার নানা পদক্ষেপ নেন। এতে রাশিয়া চুপ থাকলেও ভিক্টর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে একটি বড় বাণিজ্যিক চুক্তি করতে গেলে রাশিয়া তা মেনে নেয়নি। এরপর রাশিয়ার চাপে পড়ে ভিক্টর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে করতে যাওয়া চুক্তি বাতিল করেন। এতে তার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হয় এবং তিনি ক্ষমতাচ্যূত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান। এরপর থেকে ইউক্রেনের ক্ষমতায় রয়েছেন রুশ বিরোধীরা। তারা ক্ষমতায় আসার পর এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়, যা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ক্ষুব্ধ করে।

যে কারণে ইউক্রেনের ভেতরে রুশ অধ্যুষিত অঞ্চলের বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা শুরু করেন পুতিন। এই বিদ্রোহীদের সমর্থনে বিভিন্ন সময় রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনে হস্তক্ষেপও করেছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে সেটি নিজেদের দেশের অংশ বলে ঘোষণা করে রাশিয়া। যদিও এই অঞ্চলটি এক সময় রাশিয়ারই অংশ ছিলো।

এছাড়া ক্রিমিয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষও জাতিগত রুশ। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এটি হস্তান্তর করেন তৎকালীন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের কাছে। তখন তারা ভাবেননি, কোনো একদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবে এবং ক্রিমিয়ার ওপর মস্কোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাবে।

একারণে ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়া কোনভাবেই রাশিয়া মানতে নারাজ এবং যখনই ইউক্রেন মস্কোর প্রভাবের বাইরে চলে যাবার উপক্রম, তখনই প্রেসিডেন্ট পুতিন সেখানে হস্তক্ষেপ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।  

ন্যাটোর সদস্য হওয়ার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যেই পূর্ব ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার লাখো সেনা মোতায়েন করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা বলে আসছিল, ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। তবে রাশিয়া বলে আসছিল, ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা নেই মস্কোর। সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত পশ্চিমাদের আশঙ্কাই সত্যি হলো।

২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়ে পুতিন পূর্ব ইউক্রেনে থাকা ইউক্রেনের সেনাদের অস্ত্র ত্যাগ করে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

এসএ/