গৌরীপুরে আলুতে তড়িত গতিতে বাড়ছে নাভীদশা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৩৭ অপরাহ্ন, ২১শে জানুয়ারী ২০২৪


গৌরীপুরে আলুতে তড়িত গতিতে বাড়ছে নাভীদশা
ছবি: জনবাণী

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সবুজ,হলুদাভ, কালচে রং ধারণ করে মরছে আলু গাছ। যা স্থানীয় আলু চাষীদের নিকট ‘নাভীদশা’ (লেইট ব্লাইট)রোগ নামে পরিচিত। এ রোগে ‘চল্লিশা ও বার্মিজ’ জাতের আলু খেতে আক্রান্ত হওয়ায় ১হাজার ৩শ কৃষক নি:স্ব হয়ে পড়েছেন।


সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, চুড়ালি গ্রামের আলু চাষী সাইফুল জানান, ১১লাখ টাকা মাঠে বিনিয়োগ করে সাত একর জমির খেতের আলু কৃষকের নিকট থেকে কিনেন তিনি। খেতে যে আলু আছে, তা উত্তোলন খরচও উঠবে না। তাই আলু উত্তোলনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আরেক ক্ষুদে ব্যবসায়ী মাহাবুব আলম জানান, নিজে ৭০শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। ১৫৫শতাংশ জমির আলু কিনে ছিলেন। এসব জমির মালিককে আরও ২মাস আগেই প্রতি ১০শতাংশের আলুর জন্য ১২হাজার থেকে ১৫হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। এখন এসব ক্ষেতে মাত্র ৭-৮মন আলু পাওয়া যাচ্ছে। পূর্বে ১০শতাংশে ১৫মন থেকে ২২-২৫মন পর্যন্ত আলু পাওয়া গেছে। উত্তোলন খরচ প্রতি ১০শতাংশে ২হাজার ৫শ টাকা। প্রতি শতাংশে ৭ থেকে ৮হাজার টাকা এখন লোকসান যাচ্ছে।


আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে যাত্রী সেজে অটোরিকশায় উঠে চালককে হত্যা


এদিকে চুড়ালী গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব জানান, প্রতি কাঠা (১০শতাংশ) জমির উত্তোলন খরচ ৩হাজার টাকা। ওষুধ গিয়ে দেড় থেকে ২হাজার টাকা। রোপন ও আলুর খরচ ৮হাজার টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে ৯হাজার টাকা। লোকশান গুনতে হচ্ছে ৩ থেকে ৫হাজার টাকা। 


অনুরূপভাবে কৃষক মারফত আলী ৩০শতক,আব্দুল সালাম ৮৫শতক, রবিকুল ইসলাম ৫৫শতক, মতি মিয়া ৬০শতক, আব্দুর রশিদ ১৪০শতক, মোমেন মিয়া ৫৭শতক, আবুল কাসেম ৬০শতক, হেলাল উদ্দিন ২০শতক, আজিজুল হক মুনশী ১৩৫শতক জমিতে আলু রোপন করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কৃষক মোমেন মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার জানায়, সন্ধ্যায় আলু গাছগুলো তরতাজা দেখে গেছি। সকালে এসে দেখি কয়েকটা গাছের পাতায় সাদা সাদা পাউডার, কিছুক্ষণ পরেই পাতাগুলো ধূসর রঙের হয়ে যায়। মুর্হূতের মধ্যেই পুরো খেতের সবুজ পাতা মরে যায়। কতো ওষুধ দিলাম, মরণ ফিরে না!


এদিকে নন্দীগ্রামের নবী হোসেনের পুত্র শামছু মিয়া জানান, ৯০শতক জমিতে আলু রোপন করে ছিলেন। শুধু রোপনে আলু বীজ কিনেছেন ৪০হাজার টাকার। সার ও কীটনাশক দিয়েছেন ১৬হাজার টাকার। রোপনে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৭হাজার টাকা। এখন বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র ৫০হাজার টাকা। 


দরুন লালমা গ্রামের শামছুল ইসলাম জানান, তিনি ১৩০শতাংশ জমিনে আলু চাষ করে অর্ধলাখ টাকা গচ্ছা গেছে। আলু রোপনের একমাসের মধ্যে স্থানীয় ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ফরিয়ারা (সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী) কৃষকদের নিকট থেকে আলু খেত কিনে নিয়ে নেয়। এরপরে কৃষক আর এসব খেতে পরিচর্যা করেন না। ফরিয়ারাও একেক জন শত কৃষকের জমির আলু কিনেন। ফলে তারাও নিয়মিত পরিচর্যা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।


এ প্রসঙ্গে উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন সরকার জানান, প্রায় একমাস আগে এ রোগের প্রার্দুভাব দেখা দেয়। হঠাৎ বৃষ্টি,কুয়াশা,অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে লেইট ব্লাইটে আক্রান্ত হয়েছে। কলতাপাড়া ব্লকে ২শ হেক্টর জমির  মধ্যে ৭০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়। এতে প্রায় ৬০জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।


আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ৩


উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, উপজেলার ডৌহাখলা, রামগোপালপুর, বোকাইনগর, সহনাটী ও অচিন্তপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়। এ বছর ৪৫০ হেক্টর (প্রতি হেক্টর ৩৩শতাংশ) জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির আলু নাভীদশা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এতে প্রায় ১৩শ কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।


তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রতিকূল প্রকৃতিতে রোগটি দ্রুত ছড়ায়। কৃষককেও আগাম পদ্ধতি গ্রহণের পরামর্শ দিলেও অনেকেই গ্রহণ করেন না। আক্রান্ত হয়ে গেলে তখন রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।


আরএক্স/