হাসপাতালের একই বিল্ডিংয়ে মসজিদ-মন্দির-গীর্জা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


হাসপাতালের একই বিল্ডিংয়ে মসজিদ-মন্দির-গীর্জা

আশীষ দাশ গুপ্ত, কর্ণাটক: ভারতের নবম বৃহত্তম রাজ্য কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরে অবস্থিত নারায়ণা হৃদয়ালয় হাসপাতাল বাংলাদেশীদের কাছে ভারতের অন্যতম বিশ্বস্ত এবং সম্মানিত হাসপাতাল গ্রুপ যা বিশ্বের নেতৃত্বে রয়েছে প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন ডাঃ দেবী শেঠি, সরকার থেকে অনেক পুরষ্কার এবং প্রশংসা বিজয়ী ভারত এবং বিদেশে। ডাক্তার দেবী শেঠির হসপিটাল নামে পরিচিত। ভারতের এই হসপিটাল যেন এক টুকরো মিনি বাংলাদেশ। 
   
এ হাসপাতালের সামনে একটি বিচিত্র ময়  দৃশ্যে যা মানুষ মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে আল্লাহ/ঈশ্বর/গড/ভগবান একই সবাই সমান সবার মধ্যে প্রেম ভালবাসা থাকার জন্য একই স্থানে একই বিল্ডিংয়ে মুসলমানের জন্য মসজিদ, হিন্দুদের মন্দির, খৃষ্টানদের গীর্জা, জৈনদের পেকোটা। যে যে ধর্মের সে তার ধর্ম পালন করছে। 

এই হাসপাতালে আসা রোগী ও অভিভাবকেরা হাসপাতালে এসে যে ভুলটি করে থাকেন সেটে হচ্ছে ডাক্তার দেবী শেঠির এপোয়েনমেন্ট নেন এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ডাক্তার দেবী শেঠিকে দেখায়। দেখার পর যদি সার্জারি প্রবলেম হয় উনি সার্জারির পরামর্শ দেন এবং ঐ হাসপাতালের  কোন একজন  ডাক্তারের নিকট  রেফার করে। অথবা ঔষধ দিয়ে রোগীকে কয়েকমাস পর চেক আপ করতে বলেন। এতে মাসের পর মাস চলে যায়। এই হসপিটালে ডাক্তার দেবী শেঠি ছাড়াও অনেক বিশেষজ্ঞ কার্ডিয়াক কনসালটেন্ট ও কার্ডিয়াক সার্জন আছেন। আর এই ডাক্তারগুলো ডাক্তার দেবী শেঠি নিজেই এপয়েন্ট করেছেন। অর্থাৎ, কনসালটেন্ট ডাক্তার যারা আছেন, তারা এ জন্যই আছেন যে, প্রাথমিক সব কিছুই সেসব ডাক্তার দেখবেন এবং পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে সেগুলোর জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা দেবী শেঠি দেখবেন। কোন রোগী  যদি এখানে কোন কার্ডিয়াক কনসালটেন্টকে দেখান, এরপর সব টেস্ট ও রিপোর্ট দেখার পর, প্রয়োজন হলে সেই ডাক্তারই আপনাকে পরামর্শ দিবে দেবী শেঠিকে দেখানোর জন্য। এখানে সার্জারির সব কিছুই ডাক্তার দেবী শেঠির সিদ্ধান্তে হয় এবং তিনি যে ডাক্তারকে রেফার করবেন শুধু সেই চিকিৎসকই সার্জারী করবেন। তাই সবার উচিত প্রথমে এসেই একজন কার্ডিয়াক কনসালটেন্টকে দেখানো। এতে আপনার চিকিৎসা প্রক্রিয়া সহজ হবে ও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে  হবে না। 

কার্ডিয়াক সার্জন ডাক্তার ধরসন বিএন বলেন, ‘আমরা সেবা দেয়  অনেক রোগী দেখাতে দেরি হয় আবার যারা জানেন বুঝেন তাদের চিকিৎসা তাড়াতাড়ি হয়। রোগীর  অপারেশন সাকসেসফুল হয় আমরা ডাক্তাররা এসময় সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। বেশিরভাগ বাংলাদেশি রোগী এখানে আসার ক্ষেত্রে ভাষাটাকে প্রবলেম মনে করেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল এখানে বেশিরভাগ ডাক্তার বাংলা বুঝেন আবার কেউ কেউ বাংলা বলতে পারেন। তবুও যদি আপনার প্রয়োজন হয়, হসপিটাল থেকেই দোভাষি নিতে পারেন যারা এখানে কর্মরত আছেন। ডাক্তারের এসিসট্যান্ট আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনার প্রয়োজন আছে কি না। অথবা আপনি নিজে থেকে বললে, তারাই ডেকে নিয়ে আসবে। এজন্য কোন অতিরিক্ত ফি দিতে হবে না।  এরপর যদি সার্জারির জন্য এডমিশন হন, সেখানে বাংলাভাষী নার্স আছেন। আর বাংলা ভাষায় সাহায্যের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় নাম্বার দেওয়া আছে।’ 

এ হাসপাতালের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স সৌরব কোমলে বলেন, ‘এখানে শতকরা ৯০ পার্সেন রোগী বাংলাদেশী ও বাঙালি তারা না আসলে এ হাসপাতাল চলতো না।’  

বেঙ্গালুরু এয়ারপোর্টে  থেকে হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ৫৬ কিলোমিটার। ব্যাঙ্গালোর ট্রেন স্টেশন থেকে হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।এয়ারপোর্ট থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত আসার জন্য এয়ারপোর্ট ট্যাক্সি অথবা কম খরচে ওলা বা উবার রাইড সেবা পাওয়া যায়।  হাসপাতালের আশেপাশেই থাকার জন্য অনেক হোটেল অনেক আছে। রুমের ধরন, সুযোগ সুবিধা ও অবস্থান ভেদে খরচ একেক রকম। প্রায় হোটেল  রান্নার সুবিধা রয়েছে। তার মধ্যে সব ধরনের বাসন, ফ্রিজ এবং গ্যাসের চুলা থাকে। বাজার করার জন্য হোটেলের আশে পাশে মুদি, শাক-সবজি, মাছ, মুরগি ইত্যাদি দোকান আছে। তাই সহজেই বাজার করে নিজেরাই রান্না করে খেতে পারবেন।  বেঙ্গালুরে শতকরা ৯৯ জন মানুষ নিরামিষ খাবার খায়। 

প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষের উপরে রোগী নারায়ানা হৃদয়লয়ে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসেন। একই সাথে যখন বাংলাদেশী রোগীরা এই হাসপাতালে ভর্তি থাকেন তখন রোগীরা একজন আরেক জনের বন্ধু বা পরম আত্মীয় বনে যান। এ সময় কোন আত্মীয় স্বজন কাছে থাকে না। 

বাংলাদেশের রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডাঃ দেবী শেটীর নিকট তাদের দাবি প্রতিটি মেডিক্যাল রিপোর্ট ও অপারেশনে শতকরা ১০ পারসেন্ট কমিশন দিন অথবা বাংলাদেশের চট্টগ্রামে একটি হাসপাতাল নারায়ণা হাসপাতালের মতো পূর্নাঙ্গ হাসপাতালে পরিনত করুন, মাসে দুই দিন বাংলাদেশে সময় দিন। 

উল্লেখ্য, বেঙ্গালুরে নারায়না হসপিটালে সকল ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন।

এসএ/