থুসারার ফাইফারে ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের


Janobani

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭:৪৮ অপরাহ্ন, ৯ই মার্চ ২০২৪


থুসারার ফাইফারে ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের
ছবি: সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে ৩ রানে হেরেছিল টাইগাররা। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ উইকেটের বিশাল বড় জয়ে ঘুরে দাঁড়ায় টিম বাংলাদেশ। তবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ব্যাটারদের বাজে পারফরম্যান্সে ২৮ রানের শোচনীয় পরাজয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে শান্ত বাহিনীর।


শনিবার (৯ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ১৭৪ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় টিম শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাটারদের চরম ব্যর্থতায় ২ বল বাকি থাকতে ১৪৬ রানেই গুটিয়ে শান্ত-হৃদয়রা। এতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ দল।


লঙ্কানদের ছুঁড়ে দেওয়া ১৭৫ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেখেশুনেই শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার। তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। দলীয় ১৩ রানের মাতায় সাজঘরে ফেরেন ওপেনার লিটন কুমার দাস।


আরও পড়ুন: শেষ টি-টোয়েন্টিতে যেমন হতে পারে বাংলাদেশের একাদশ


সেই ওভার শেষ না করেই ম্যাথুস উঠে যান। এরপর তার অসম্পন্ন ওভার শেষ করতে আসেন ধনাঞ্জয়া। এসেই লিটনকে ফিরিয়েছেন এই বোলার। ধনাঞ্জয়ার অফ-স্ট্যাম্পের ডেলিভারিতে ওপরে ক্যাচ তুলে দেন ওপেনার লিটন।


লিটনের ফেরার পর রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন নুয়ান থুসারা। নিজের প্রথম ওভারে বল করতে এসেই হ্যাটট্রিক করেন লঙ্কান এই পেসার।


শুরুটা করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে দিয়েই। এরপর হৃদয় এবং সবশেষে মাহমুদউল্লাহ! ৩ বল ব্যবধানে ১৫/১ থেকে বাংলাদেশ সমিকরণ দাঁড়ায় ১৫/৪!


লিটনকে হারিয়ে বিপদে পড়া লাল-সবুজ শিবিরকে আরও হতাশায় ডুবান অধিনায়ক শান্ত। থুসারার চমকপ্রদ এক ডেলিভারিতে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফিরে যান শান্ত। ঠিক পরের বলেই ভাঙল ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়ের স্ট্যাম্পও। লেংথের সিম ডেলিভারি বুঝে উঠতেই পারেনি মিডল অর্ডারের তরুণ এই ব্যাটার।


আরও পড়ুন: সৌম্যতেই শুরু সৌম্যতেই ভরসা হাথুরুর


এরপর হ্যাটট্রিকও করেন থুসারা। তার লেংথ থেকে নিচু বলে স্কয়ারড-আপ হয়ে ফিরেছেন অভিঙ্গ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রিভিউ নিয়েও কোনো ফায়দা হয়নি। আম্পায়ার্স কলের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। ফলে পঞ্চম লঙ্কান বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক পান পেসার থুসারা।


এরপর দলের হাল ধরতে পারেননি আরএক ওপেনার সৌম্য সরকারও। থুসারার আঘাত থেকে রক্ষা পাননি এই ব্যাটার। নিজের ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে তাকেও ক্লিন বোল্ড করেছেন লঙ্কান এই বোলার।


দলের বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন জাকের আলী ও মেহেদী হাসান। তবে হাসারাঙ্গার গুগলিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে কাঁটা পড়েন ব্যাটার জাকের। সাথে সাথে রিভিউ নিলেও বহাল থেকেছে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্তই।


ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা টিম টাইগারকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মেহেদী-রিশাদ জুটি। তবে সেটিও বেশিক্ষণ টেকেনি! ৩১ বলে ৪৪ রানে ভেঙে যায় এই জুটি। মেহেদীকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন লঙ্কান দলনেতা হাসারাঙ্গা।


আরও পড়ুন: জরুরি বোর্ড মিটিং ডেকেছে বিসিবি


এরপর টপ-অর্ডার এবং মিডল-অর্ডারের চরম হতাশার দিনে ব্যাট হাতে চমক দেখিয়েছেন স্পিনার রিশাদ হোসেন। দলীয় বিপর্যয়ের মুহূর্তে ব্যাট করতে নেমে ২৬ বলে ৭ ছক্কায় অর্ধশতক করেন এই স্পিনার। তবে এরপর আর সেভাবে হাসেনি তার ব্যাটও। শেষ পর্যন্ত ১৪৬ রানে থেমেছে টাইগারদের ইনিংস।


এর আগে, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে সফরকারীদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় টাইগার কাপ্তান নাজমুল হোসেন শান্ত।


ব্যাট করতে নেমে তাসকিন-শরিফুলের আঁটসাঁট বোলিংয়ে শুরুর দিকে বেশ চাপে পড়েছিল লঙ্কান ব্যাটাররা। তিন ওভারে মাত্র ১৮ রান তুলতে পেরেছিল শ্রীলঙ্কা দল।


এরপর চতুর্থ ওভারে প্রথম বেকথ্রু এনে দেন তাসকিন আহামেদ। সৌম্য সরকারের তালুবন্দী করে ওপেনার ধনঞ্জায়া ডি সিলভাকে প্যাভিলিয়নে ফেরান এই পেস সেনসেশন।


ডি সিলভা ফিরে গেলে মেন্ডিসের সঙ্গী হন ব্যাটার কামিন্দু। তবে ক্রিজে থিতু হওয়ার আগেই ড্রেসিংরুমে ফেরেন কামিন্দুও। রিশাদের ওভারে ১২ রানেই শরিফুলের তালুবন্দী হন তিনি।


এরপর কুশল মেন্ডিসের সাথে দলের হাল ধরেন দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফেরা অধিনায়ক হাসারাঙ্গা। তবে প্রত্যাবর্তনের দিনে সুন্দর গল্প লিখতে পারেননি তিনিও। ১ ছক্কা ও ১ চারে ১৫ রানে প্যাভিরিয়নে ফেরেন এই ব্যাটার।


আরও পড়ুন: এখন আমরাও টি-টোয়েন্টি খেলতে পারি: ক্রীড়ামন্ত্রী


চারিথ আসালাঙ্কাকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখান পেসার শরিফুল ইসলাম। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন ব্যাটার কুশল মেন্ডিস। ৩৫ বলে দুর্দান্ত ফিফটি তুলে নিয়ে ক্রমেই সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছিলেন এই ব্যাটার। তবে তাকে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে দেননি পেসার তাসকিন। ডেথে ওভারের শুরুর দিকেই ফিরে যান তিনি। তাসকিনের ওভারে ৫৫ বলে ৮৬ রানে শর্ট মিডউইকেটে তালুবন্দী হয়ে ফেরেন লঙ্কান এই ব্যাটার।


শেষ দিকে দাসুন শানাকার ৯ বলে ১৯ রানের ক্যামিও ইনিংসে ভরকরে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ১৭৪ রানের বড় লক্ষ্য পায় সফরকারীরা।


এদিন টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন রিশাদ ও তাসকিন আহামেদ।


এমএল/