ভয়াল সেই কালরাত্রিতে ফারুক আহমেদরা চৌকির নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন


Janobani

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৪৮ অপরাহ্ন, ২৫শে মার্চ ২০২৪


ভয়াল সেই কালরাত্রিতে ফারুক আহমেদরা চৌকির নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন
ফারুক আহমেদ | ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের এই কালো রাতে ১১ বছরের শিশু ছিলেন আজকের জনপ্রিয় অভিনেতা ফারুক আহমেদ। ভাইবোনদের সাথে হই-হুল্লোড় করে সেদিনও ঘুমিয়ে পড়েন তারা। ঘুমানোর কিছু সময় পরই বিকট শব্দে হঠাৎ তাদের ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে অনেক গোলাগুলি হচ্ছে। সময় যত পেরোই, ততই বাড়তে থাকে শব্দ। সেই সময়টা জীবনে যেন এখনও দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে। সেই দুঃসহ স্মৃতি যেন এখনো ভুলতে পারেননি তিনি। শরীরে গুলি লাগার ভয়ে ঘরের চৌকির নিচে সেদিন জড়সড় হয়ে বসে ছিলেন তারা সবাই। 


সেই কালো রাতের স্মৃতি স্মরণ করে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা বাড়িতে ভাইবোনেরা আড্ডা দিতাম এবং দুষ্টুমি করতাম। একসাথে খেলাধুলা করতাম। আর ওই বয়সটা তো তেমনই। আমরা তখন পুরান ঢাকার কাগজীটোলায় আমার এক চাচাতো ভাইয়ের বাসায় ছিলাম। সময়টা বেশ ভালোই কাটছিল। অন্যদিনের মতোই সকাল সকাল উঠতে হবে ভেবে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ২৫ মার্চ রাত ১১টার দিকে বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছি। ১২টার কিছুসময় পর তীব্র গোলাগুলির শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে গেল। আমরা তখন বুঝতে পারছিলাম না। ঘটনা কী হচ্ছে? কেনই বা এত গোলাগুলির শব্দ! বাসার সবাই ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে রইলাম।’


আরও পড়ুন: সুপারস্টার শাকিব খান অভিনয় পারেন না: রানা সরকার


তিনি বলেন, রাত যত গভীর হতে থাকে, আতঙ্ক যেন ততই বাড়তে থাকে। সবার ঘুম হারিয়ে যায়। সারাক্ষণ মনে হয়, এই বুঝি গুলি এসে গায়ে লাগবে। চারপাশে শুধুই গুলির শব্দ; বাইরে বের হওয়ার মতো কোনো উপায় নেই। ‘গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর থেকে অনবরত গুলির শব্দই চলতে থাকে। আমাদের সবার কান বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না। আমাদের অনেক বেশি ভয় লাগছিল। কারণ, আমরা যে বাসায় ছিলাম সেটা টিনের ঘর ছিল। একবার এদিকে গুলি এলেই আমাদের শরীর ভেদ করে যাবে। আর যে কারণে আরও ভয় বেড়ে গেল। কোন দিক থেকে টিন ভেদ করে আমাদের শরীরে গুলি এসে লাগে, এই ভয়ে আমার মা আমাদের চার ভাইবোনকে চৌকির নিচেই বসিয়ে রাখলেন।


সাধারণ মানুষ, শিশু–কিশোরেরা তখনো পর্যন্ত বুঝতে পারেনি এত গোলাগুলির কী কারণ? কারাই বা অতর্কিতে ভাবে হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু একটা সময়পর এটা আর বুঝতে বাকি রইলো না যে পাকিস্তানিরা এই বর্বর হামলা চালিয়েছে। নির্বিচারভাবে মানুষ খুন করছে। ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি তো তখন অনেক ছোট। পরে ভোরবেলা জানতে পারলাম যে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী রাত ১২টা থেকে ঢাকা শহরে আক্রমণ শুরু করেছে। তখনো আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। কিন্তু কেন এই হামলা, আমরা সেটার কিছুই জানি না।’


এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘আমরা সকালে এক ব্যক্তির মাধ্যমে প্রথমে জানতে পারলাম যে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নির্বিচার ভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ঢুকে গুলি করে ছাত্রছাত্রীদের হত্যা করছে। রাস্তাঘাটে যাকে পাচ্ছে, তাকেই নির্মমভাবে হত্যা করছে। ঢাকার রাজপথ রক্তে লাল হয়ে গেছে। সেই লোকটার কথা শুনে বাসার সবাই হতভম্ব হয়ে যাই। লোকটি একনিশ্বাসে এই কথাগুলো বলে আবার দৌড়ে চলে যায়।’


আরও পড়ুন: শাকিব খানের মায়ের চরিত্রে মাহি!


তখনো ভয়ে চৌকির নিচেই ছিলেন। সকাল বেলা সামান্য নাশতা করেন। পরে আবার ভয়ে চৌকির নিচেই নিচু হয়ে বসে থাকেন ফারুক আহমেদরা। গোলাগুলির শব্দ আরও তীব্র হয়েছে তখন। ফারুক আহমেদ বলেন, ‘পাশাপাশি বসেও একজনের কথা আমরা আরেকজন শুনতে পাচ্ছিলাম না। সারাটা দিন ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যেই কেটেছে। এখনও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, ভয়াল কালরাত্রি আমার চেখের সামনে ভেসে ওঠে। আর আমি সে সময় বুকের মধ্যে এক তীব্র বেদনা অনুভব করি।’


সকাল থেকেই এই অভিনেতাকে শুনতে হচ্ছে ‘শুভ জন্মদিন’। কারণ, আজ ২৫ মার্চ এই অভিনেতার শুভ জন্মদিন। কিন্তু এই দিনে কখনোই জন্মদিন পালন করেন না তিনি। অন্যান্য দিনের মতোই কাটিয়ে দেন দিনটি। ফারুক আহমেদ জানান, যারা তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাদের কে অনেক অভিনন্দন। কিন্তু তিনি এই দিনটি উদযাপন করেন না। দিনটি তাকে ২৫ মার্চের কালো রাতে নিয়ে যায়, যে আতঙ্কে এখনো তার ঘুম ভেঙে যায়।


এমএল/