কুষ্টিয়ায় জিকে সেচ কার্যক্রম বন্ধ দিশেহারা কৃষক

বিঘা প্রতি মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে কৃষকেরা সেচের পানি পেতেন
বিজ্ঞাপন
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার কয়েক লাখ কৃষক। বিঘা প্রতি মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে কৃষকেরা সেচের পানি পেতেন।
গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে) মাধ্যমে পানি না পাওয়ায় শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ বাবদ প্রতি বিঘায় খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। স্বল্প মূল্যের সেচব্যবস্থা বন্ধ হওয়ায় ৩০ থেকে ৩৫ গুণ বেশি খরচ করে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে ধানের জমিতে সেচ দিচ্ছে কৃষকরা।
বিজ্ঞাপন
চলমান এই সমস্যা কত দিনে সমাধান হবে বা কৃষক কবে জমিতে পানি পাবে তা-ও জানেনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় কৃষকেরা জানান,গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের প্রধান এবং শাখা খালে পানি না থাকার ফলে পানি সর্বরাহ খালের আশপাশের পুকুর-নলকূপেও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বোরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সেচ প্রয়োজন হয়। ধান চাষের শুরু থেকে ধানের দানা আসা পর্যন্ত জমিতে পানি দিতে হয়, জানুয়ারি থেকে ধান চাষ শুরু করেছে চাষিরা। কিন্তু পানি সরবরাহের শুরুর মাত্র ১৯ দিন পর থেকে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। কারণ হিসেবে জানা যায়, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প তিনটা পাম্পের মাধ্যমে পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে সরবরাহ খালের মাধ্যমে বন্টন করা হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিনটি পাম্প বিকল হয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, পদ্মা নদীতে পানির স্তর স্বাভাবিক থাকলে প্রকল্পের একেকটি পাম্প দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২৮ হাজার ৩১৬ দশমিক ৮৫ লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মোট তিনটি পাম্পের ৩ নম্বর পাম্প ২০১৭ সালে ও ২ নম্বর পাম্প ২০২১ সালে বিকল হয়েছে। ১৯৬২ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের মাধ্যমে পদ্মা নদী থেকে পানি এনে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩টি উপজেলায় পানি সরবরাহ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সেচ যোগ্য এলাকা রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ১০৭ হেক্টর।
বিজ্ঞাপন
১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা খাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার উপ-খালের মাধ্যমে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার কৃষকদের সেচ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সচল সেচ পাম্পটি বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে চার জেলার ১৩টি উপজেলায় কৃষি কাজে নেমে আসে স্থবিরতা। বোরো আবাদ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে অনেকেই উচ্চ মূল্যে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে ধানের জমিতে পানি দিচ্ছে। একই সাথে পাম্প বিকল হওয়ায় বোরো মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবেনা।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) কৃষক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আমরা এখনো পানি পাইনি। এই মৌসুমে পানি পাওয়া যাবে না এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বিঘা প্রতি শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচের পানি নিতে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ-র ফলে বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে।
কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হায়াত মাহমুদ বলেন, গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের পাম্প বন্ধ হওয়ায় বোরো চাষে কৃষকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। বিষয়টি আমি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে অবহিত করেছি। হয়তো ফলন কম হবে। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে ধান উৎপাদনে কৃষকদের অনেক ব্যয় বাড়বে।
বিজ্ঞাপন
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চার জেলার মোট ১৩টি উপজেলায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ কার্যক্রম বিস্তৃত।
বিজ্ঞাপন
এমএল/