টেকনাফ উপজেলা নির্বাচন, কার বেশি জনপ্রিয়তা আলম নাকি জাফর?


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:০৩ অপরাহ্ন, ২৫শে মে ২০২৪


টেকনাফ উপজেলা নির্বাচন, কার বেশি জনপ্রিয়তা আলম নাকি জাফর?
ছবি: প্রতিনিধি

তৃতীয় ধাপে বুধবার (২৯ মে) সীমান্তঘেঁষা টেকনাফ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বতর্মান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাফর আহমেদ। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, তত তাদের মধ্য চলছে পাল্টা-পাল্টি হুমকি-ধামকি। 


এছাড়া সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের এই  নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন তিনজন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন। তবে ভোটারদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু চেয়ারম্যান প্রার্থী দুই হেভিওয়েটকে ঘিরে। এখন দেখার বিষয় ভোটারদের মাঝে কে বেশি জনপ্রিয়? ভোটররা তাদের কোন জনপ্রিয়নেতাকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বেঁচে নেন উপজেলা পরিষদের অভিবাবক হিসেবে! 


এদিকে, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম (টেলিফোন) টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এবং সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশরের ছোট ভাই। এছাড়া দলের একটি বড় অংশসহ নুরুল আলমের পক্ষে কাজ করছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুল হক মার্শাল ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান মাবু।


আরও পড়ুন: উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন


স্থানীয়দের ভাষ্য মতে বলেন, আলমের বড় ভাই নুরুল বশর গেল সাংসদ নির্বাচনে আলোচিত সমালোচিত সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তারের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ভোটে হেরেছেন। এর পর থেকে বদির সাথে তাদের বিরোধ আরও বাড়ে। এছাড়া স্থানীয় রাজনীতিতে তারা দুইভাই বদির বিরোধী হিসেবে পরিচিত। আর চেয়ারম্যান প্রার্থী জাফর আহমেদ (আনারস) বদির অনুসারী হিসেবে মাঠে তার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে জাফরকে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠে বদি। তবে বদি শেষমেষ কোনদিকে মোড় নেন এমন সন্দিহান ভোটারদের। জাফর আহমেদ সাবেক বিএনপি নেতা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেসময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) করা মামলা সম্প্রতি সময়ে তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ পত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ৪ কোটি ৮০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩১ টাকার সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জন এবং ভোগ দখলে রেখেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, টেকনাফ পৌরসভার ভোট যার দিকে ঝুকবে, সেই চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার সম্ভবনা থাকবে। যার ফলে সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি এ নির্বাচনে ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন অনেকে। কারন পৌরসভা ভোটারদের একটি বড় অংশ বদির পক্ষে রয়েছে। বদি যেদিকে ইছাড়া করবে সেদিকে ভোট দিবেন।' 


তবে সম্প্রতি ছাত্রলীগের এক সভায় বদি বক্তৃতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক মেম্বার ও আ'লীগ নেতা মো. হাম জালাল বলেন,'বদি পাঁচ কেজি চাল বিতরনের ভিডিও প্রকাশ করে টেকনাফের মানুষের সম্মান ক্ষুন্ন করছে। পাশাপাশি লুটপাট করতে বদি একজন দূর্নীতিগ্রস্ত মানুষের নির্বাচন করছে। মানুষ ২৯ মে  দূর্নীতিগ্রস্ত মানুষকে বয়কট করবে। তাই নুরুল আলম বিগত ৫ বছর স্বচ্ছতার সাথে টেকনাফে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের কারণে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচিতিসহ অসংখ্য সমর্থক রয়েছে। এছাড়া সর্বদলীয় মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাড়িয়ে গ্রহণ করেছেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ধর্ম-বর্ণের বৃত্তের বাইরে গিয়ে নানা জনহিতকর কাজ করার শিক্ষা অর্জনের মধ্যদিয়ে- নিজেকে একজন নেতা হিসেবে নিজেকে যেমন গড়ে তুলেছেন, তেমনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদের সুবিধা সমূহ সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন।'


আরও পড়ুন: সাবেক এমপি জাফরকে পরাজিত করে আবারও চেয়ারম্যান সাঈদী  


বদিকে হুশিয়ারি দিয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিনুল হক মার্শাল বলেন, 'হুমকি দিয়ে লাভ নেই। নির্বাচনীয় পরিবেশ অশান্ত করতে চেষ্টা করবেন না। কারন টেকনাফের মানুষ শান্তি প্রিয়। জনসভায় স্থানীয় নির্বাচনে হুমকি-ধমকি দিয়ে লাভ নেই, নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে হলে স্মার্ট প্রার্থীকে বেচে নিবে সাধারণ জনগণ।' 


টেলিফোন প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়ে মার্শাল বলেন, 'ক্ষমতা যদি এককেন্দ্রিক হয় তাহলে সাধারণ মানুষ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। তাই জনসাধারণ নুরুল আলমের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছে।'


তবে এক পথসভায় সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি বলেন, নুরুল আলম পাঁচ বছর লুটপাট করে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে যা হলফনামায় উল্লিখিত। সাধারণ মানুষ তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা পরিবর্তন চাই। এবারে আনারস প্রতীকের প্রার্থী জাফর আহমদ নির্বাচিত হলে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।


তবে সাধারণ জনমতে জরিপে ৬ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় তিনটি ইউনিয়নে টেলিফোন প্রতীকের নুরুল আলম এগিয়ে, অন্যদিকে বদির সমর্থনে পৌরসভায় জাফর আহমদ এগিয়ে থাকলেও বাকী ইউনিয়ন গুলোতে হাড্ডাহাড্ডি ভোট যুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন ভোটারেরা।


আরও পড়ুন: নব গঠিত ঈদগাঁও উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান আবু তালেব


তরুণ ভোটার আরিফুর রহমান বলেন, স্মার্ট মডেল পর্যটনবান্ধব শিক্ষা হারে পিছিয়ে পড়া এবং মাদকের দুর্নাম মুছে টেকনাফে এগিয়ে নিতে একজন শিক্ষিত-পরিক্ষিত চেয়ারম্যানের প্রয়োজন। পাশাপাশি আমাদের চাওয়া হচ্ছে বিশৃঙ্খল ছাড়া একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন হোক।'


প্রসঙ্গত, ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত টেকনাফ উপজেলা। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১লক্ষ ৮০ হাজার ৪২০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৯১ হাজার ৮৮০ জন। মহিলা ভোটার ৮৮ হাজার ৫৩৮ জন। ৬০ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ৫০২ টি। তারমধ্যে, স্থায়ী বুথ ৪৪১ টি এবং অস্থায়ী বুথ ৬১ টি। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


এমএল/