সেন্টমার্টিনে চিকিৎসা সেবা বিপর্যয়ের আশংকা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:০১ অপরাহ্ন, ২৪শে জুন ২০২৪


সেন্টমার্টিনে চিকিৎসা সেবা বিপর্যয়ের আশংকা
ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জের ধরে দেশের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে স্বাভাবিক রুটে নৌ যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিশেষ ও জরুরি প্রয়োজনে বিকল্প রুটে সীমিত পরিসরে চলছে নৌ যান সমুহ। এর মধ্যে দ্বীপটির চিকিৎসা সেবা নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।


স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য বলছে, দীর্ঘদিন ধরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার লোক সেন্টমার্টিন ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে। ২০ শয্যার হাসপাতালে ১জন মেডিকেল অফিসার, ১জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ১ জন মিডওয়াইফ এবং ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাত্র ১ জন অফিস সহায়ক কর্মরত আছে। এ স্বল্প সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ জন এনজিও কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে হাসপাতালটি চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু বাজেট স্বল্পতা বা প্রকল্পের মেয়াদের কারণে আগামী ৩০ জুন হাসপাতালের এনজিও কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকুরীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এতে এনজিওর নিয়োগপ্রাপ্ত ১৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকছে না। এ পরিস্থিতি হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের চিকিৎসা সেবা মারাত্মক ব্যাহত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।


আরও পড়ুন: বিকল্প পথে সেন্টমার্টিন নৌ যোগাযোগ স্বাভাবিক হচ্ছে


টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রনয় রুদ্র জানিয়েছেন, টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারে সরকারী বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী বাহিনীর অভ্যন্তরীন দ্বন্ধের কারন প্রায়শ মর্টার শেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। মাঝে মাঝে ওপারের গোলাগুলি নাফ নদীতেও পড়ে। নাফনদী দিয়ে সেন্টামার্টিন যাত্রার সমস্ত নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকল্প পথে সীমিত পরিসরে নৌ যান চলছে। এতে স্বাভাবিক পরিস্থিতির মতো খাদ্য দ্রব্য ও ঔষধ সামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে খাদ্যদ্রব্য ও ঔষধপত্রের কিছুটা অভাব রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জুন এনজিওর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে দ্বীপে কর্মরত এনজিওর ১৬ জন জনবল থাকবে না। এতে চিকিৎসা সেবা বিপর্যয় হবে। বিষয়টি ইতোমধ্যে লিখিত আকারে উধ্বর্তন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।


ডা, প্রনয় রুদ্র জানান, দ্বীপটি স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র অবলম্বন এটি। এটি ধারাবাহিকতা না থাকলে দ্বীপের জরুরি সময়ে চিকিৎসা সেবা বিপর্যয় হবে। তাই জরুরি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।


কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার জানিয়েছেন, ৩০ জন এনজিওর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি সরকারের সকল মহলে অবিহিত রয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা শুরু হয়েছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে একটা ভালো সংবাদ পাওয়া যাবে।


আরও পড়ুন: মিয়ানমারে সংঘাত: সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ থামছে না


সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, দ্বীপের হাসপাতালে অনেকটা প্রাথমিক চিকিৎসাই প্রদান করা হয়। একটু জটিল হলেই দ্রুত টেকনাফ বা কক্সবাজারে নিয়ে যেতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে কর্মরত পদে থাকা লোকজন না থাকলে প্রাথমিক চিকিৎসাও পাওয়া যাবে না। দ্বীপের এমন পরিস্থিতিতে এটার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।


মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে গত ১ জুন বিকালে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের যাওয়া হওয়া পন্য সহ ১০ জন যাত্রীর ট্রলারকে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে কয়েক গুলি বর্ষণ করা। গত ৫ জুন সেন্টমার্টিনের স্থগিতকৃত একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নির্ধারণের জন্য ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোট শেষে ফেরার পথে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ ফেরা ট্রলারকে আবারও গুলি করা হল একই পয়েন্টে। 


গত ৮ জুন আরও একটি ট্রলারকে গুলি করা হয় একই পয়েন্টে। সর্বশেষ ১১ জুন একটি স্পীড বোটকে লক্ষ করে গুলি বর্ষণ করা হয়। তবে এই গুলি বর্ষণের ঘটনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরের জলসীমায় ছিল। মিয়ানমারের জলসীমা থেকে ট্রলআর যোগে এগিয়ে এসেই এই গুলি বর্ষণের ঘটনাটি করা হয়। একই ৪ বার গুলি বর্ষণের ঘটনায় কোন হতাহত ছিল না। এই কারণে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ যান বন্ধ হয়ে যায়। এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট ও জরুরি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হল। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ১২ জুন জরুরি সভা করে বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে যাত্রীর আসা যাওয়া ও পন্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৩ জুন থেকে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডার ডেইল উপকুল ব্যবহার করে যাত্রী আসা-যাওয়া শুরু হল। ১৪ জুন কক্সবাজার শহর থেকে পন্য নিয়ে গেল জাহাজ। আর বিকল্প পথ হিসেবে শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে সীমিত পরিসরে কিছু নৌ যান চলছে।


এমএল/