সম্পদ দখলের অভিযোগ প্রবাসীর স্ত্রী ও স্থানীয় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৪৯ অপরাহ্ন, ৬ই জুলাই ২০২৪


সম্পদ দখলের অভিযোগ প্রবাসীর স্ত্রী ও স্থানীয় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে
ছবি: প্রতিনিধি

এলাকায় যেন আতঙ্কের নাম রাজন মোল্লা। দখল, দমন, জবরদস্তি, অবৈধ বাণিজ্য সবকিছুরই অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মূলত যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে তারই লেবাস ধরে রাজন মোল্লা, সুবিধা ভোগের চেষ্টা করে নিজের অনিয়মের পক্ষে। প্রকৃতপক্ষে রাজন মোল্লা ও তার পিতা সাবেক চেয়ারম্যান গেদু মোল্লা বিএনপির সক্রিয় কর্মী বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।


কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের রাজন মোল্লা সবশেষ দখল করেছে ২২ বছর সৌদি আরব প্রবাসী উদ্যোক্তা শেখ আব্দুল্লাহ'র জমি ও বহুতল ভবন, যার বাজারমূল্য ৩ কোটির বেশি। এরই প্রেক্ষিতে ফের তীব্র আলোচনায় এই যুবক। ইতোমধ্যেই তাকে ঘিরে খবর প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। হত্যার হুমকি ও দখলের কথা জানিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার  থানায় অভিযোগও জানিয়েছে।


রাজন মোল্লার ত্রাসের রাজত্বের ভয়ে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাংয়ের বাজার এলাকা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বেশকিছু লোক জানান, রাজন মোল্লা সুদের ব্যবসা করে। প্রধানত সে মাদক ব্যবসায়ী ও প্রবাসীর স্ত্রীদের সাথে অর্থ লেনদেন করে এবং সুযোগ মতো মোটা অংকের টাকা ও সম্পদ হাতিয়ে নেয়, তার বাবা সাবেক জনপ্রতিনিধি হওয়ায় এবং তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে না। সম্প্রতি প্রবাসী আবদুল্লাহর বাড়ি দখল করেছে তাঁর স্ত্রীকে ফাঁদে ফেলে।


ফরজ মন্ডলের ছেলে প্রবাসী আবদুল্লাহর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আব্দুল্লার স্ত্রী শাহিদা খাতুনের সাথে ব্যাক্তিগত ভাবে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করে রাজন মোল্লা। উভয়েই যোগসাজশে অনেকগুলো বছর যাবৎ আব্দুল্লাহর টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। এখন আব্দুল্লার জমি ও বাড়ি দখলের জন্য ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর পাঁয়তারা চালাচ্ছে।


স্থানীয় অটো চালক মসলেম জানান, রাজন ভালো প্রকৃতির মানুষ না, সে মহিলাদের মাথা ওয়াশ করে, প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে কিছু টাকা দেয় তারপর নেয়া শুরু করে। তার ব্যক্তিগত ও নামমাত্র এনজিওর সুদ টানতে টানতে আশপাশের এলাকার মানুষ নাজেহাল। নিঃস্ব অনেকেই।


আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় কিশোর গুলিবিদ্ধ, গ্রেফতার হয়নি কেউ


তবে, শেখ আব্দুল্লাহর স্ত্রী শাহিদা খাতুন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, আমার স্বামী আব্দুল্লাহ্ ওরফে সেকু আমার সাথেই প্রতারণা করেছে বিভিন্ন লোকের কাছে থেকে টাকা নিয়ে সম্পদ কিনেছি, বাড়ি বানিয়েছি তার কথা মতো, এখন সে সব অস্বীকার যাচ্ছে।


প্রবাসী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী স্বামীর নাম করে শাহিদা খাতুন বিভিন্ন  মানুষের কাছে মোটা অংকের নগদ অর্থ নিয়েছেন বলে জানা গেছে৷ কেউ কেউ বলছেন স্ত্রীকে ব্যবহার করে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে প্রবাসী আব্দুল্লাহ্, আবার কারো কারো দাবি, আব্দুল্লাহ অনেক বছর বিদেশে থাকার সুবাদে তার স্ত্রী অন্যান্যদের সহযোগিতায় অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, এখন হিসাব মেলাতে না পেরে আব্দুল্লাহ ওরফে সেকুর সম্পদ স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনকে ব্যবহার করে লুটে নেয়ার চেষ্টা করছে।


সরেজমিনে দেখা যায়, জমি সহ বাড়ি দখল ও হুমকি দেয়ায় অভিযুক্ত রাজন মোল্লা ও তার পরিবারের অবৈধ ইট ভাটা,    অনিয়মের ডিশ ব্যাবসা, অনিয়মের ইন্টারনেট ব্যাবসা, অনিয়মের ওষুধের দোকান এবং ডিজিটাল ঋণদান সমবায় সমিতির নামে-বেনামে বিশাল সুদের নেটওয়ার্ক। পাশাপাশি এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে বিভিন্ন অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে তার এলাকাবাসীর কাছে।


আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ২৪ দিনেও খোঁজ মিলেনি স্কুল ছাত্রীর, পরিবারের দাবী অপহরণ


ডিজিটাল ঋণদান সমবায় সমিতির নিয়োগ দেয়া অফিস সহায়ক আলম বলেন, আমাদের কিস্তি তোলার আলাদা স্টাফ আছে, আমরা লোন দেই এবং সুদ সহ কিস্তি হিসাবে টাকা তুলি। 


তবে একটি ছোট্ট টিন শেড ঘর ছাড়া কোনো সমবায় সমিতির কার্যালয় দেখা যায়নি ডিজিটাল ঋণদানের আড়ালে রাজন মোল্লার ব্যক্তিগত এই সুদ ব্যবসার।


দৌলতপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, ডিজিটাল ঋণদান সমবায় সমিতির কার্যক্রম যাচাই করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


এসব প্রসঙ্গে রাজন মোল্লার সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, 'আব্দুল্লার স্ত্রীর সাথে বাড়ির বায়নানামা করা আছে'। পরবর্তীতে সকল প্রশ্নের উত্তর অযৌক্তিক  ও অসংলগ্ন দিয়েছেন রাজন মোল্লা। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলারই সময় পাননি তিনি। তার আগে বেশ কয়েকজন প্রতিবেদক কয়েকদিন ধরেও তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছে।


দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বাড়ি দখল ও হুমকি সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন, আমার জানামতে এবিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান, আমাদের হাতে বর্তমানে কিছু নেই। জনি নামে একজনকে হুমকি দেয়া হয়েছিলো আমরা বিষয়টির আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি।


এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ  গণমাধ্যমকে জানান, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


জেবি/এসবি