ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে যাচ্ছে বাগেরহাটের পরিবেশবান্ধব কাঠের বাড়ি


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:০৫ অপরাহ্ন, ১৪ই জুলাই ২০২৪


ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে যাচ্ছে বাগেরহাটের পরিবেশবান্ধব কাঠের বাড়ি
ছবি: প্রতিনিধি

বাগেরহাটের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে রপ্তানি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশি কাঠের বাড়ি।এই বাড়ির কাঠামো, দেয়াল, দরজা-জানালা এমনকি ছাদও কাঠের তৈরি। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন বাজার ও কর্মসংস্থান, আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এই উদ্যোগ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ন্যাচারাল ফাইবার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ। প্রথমবারের মত নিজ দেশের পণ্য ইউরোপের বাজারে রপ্তানিতে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে খুশি শ্রমিকরা।


পরিবেশের ক্ষতি করে না এমন পণ্য ব্যবহার করে ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম থেকে চলতি বছরের প্রথম দিকে ১২০টি বসতবাড়ি তৈরির অর্ডার পান বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ । এরপর থেকে পরিবেশ বান্ধব বসতবাড়ির তৈরির উদ্যোগ নেয় তার প্রতিষ্ঠান ন্যাচারাল ফাইবার।  


আরও পড়ুন: বাগেরহাটে স্বামী-স্ত্রীর একইসঙ্গে আত্মহত্যা


মোস্তাফিজ বলেন, বেলজিয়ামের একটি ইকো পার্ক এই অর্ডারটি দিয়েছে। তাদের ১২০ টি এমন ঘর প্রয়োজন। আমাদের আগামী দুই বছরের মধ্যে এই ঘরগুলো তাদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। আমাদের সাথে তাদের চুক্তি হয়েছে, দেশি মেহগনি কাঠ দিয়ে এই ঘরগুলো তৈরি করতে হবে। এছাড়া এসব বাড়ির কাচামাল বায়োগ্রেডিবল বা পরিবেশে মিশে যায় এমন হতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন পণ্য চলবে না।


আশেপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা কাঠ দিয়ে বসতবাড়ি তৈরি করা হয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটিতে। বাগেরহাটের সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কররীতে নিজস্ব কারখানায়  তৈরি করা হচ্ছে কাঠের এসব বসতবাড়ি। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ তৈরি করছেন বসতঘরের দরজা জানালা, কেউ ফ্রেম আবার কেউ তৈরি করছেন দেয়াল। সবশেষে শ্রমিকদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রং ও পালিশের মাধ্যমে শেষ করা হচ্ছে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব  কাঠের বসতবাড়িগুলো। 


প্রথমে কাঠ কেটে ও সাইজ করে পুরো বাড়িটি তৈরি করেন শ্রমিকরা। এই ঘরটি ১১ মিটার লম্বা এবং চাউড়া ৪ মিটার। সম্পুর্ন কাঠের তৈরি।এরপর বিভিন্ন অংশকে ছোট আকারে খন্ড খন্ড করা হয়। এর ফলে পুরো বাড়িটিকে স্বল্প স্থানে পরিবহন করা সহজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই খন্ডাংশগুলো জুড়ে দিলে সহজেই যেকোন জায়গায় স্থাপন করা যায় এই বাড়িগুলো। 


কারখানার শ্রমিক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা আগে কখনো এই ঘর তৈরি করিনি। এখন দেখছি খুবই সুন্দর হয়েছে ঘরগুলো। সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে এই ভাবে ঘর তৈরি করা যায় কখনও ভাবতেও পারেনি।


আরও পড়ুন: বাগেরহাটের নবাগত জেলা ও দায়রা জজের বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন


কাঠমিস্ত্রি মোজাহিদ বলেন, আমাদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারপরে ডিজাইন দেখে সম্পূর্ণ একটি বসতঘর তৈরি করেছি। এরপর কোম্পানি ও বিদেশি লোকজন দেখে পছন্দ করছে। এখন আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতিটি বসতঘর তৈরি করতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। আমাদের বসত তৈরি করতে প্রায় দুইশো শ্রমিক কাজ করছে।


গেল ছয় মাস ধরে এই কারখানায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় শতাধিক শ্রমিক। এর আগে  কারখানাটিতে তৈরি কাঠের বিভিন্ন পণ্য বেশ সাড়া ফেলেছিলো ইউরোপের বাজারে। সেসময় প্রতিষ্ঠানটিতে তৈরি হত  কাঠের সাইকেল,সান বেড, হোটেল বেড, কুকুর-বিড়ালের খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন পণ্য। তবে বর্তমানে শুধু কাঠের বাড়ি তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি।


বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের বাগেরহাটের শিল্পনগরী কর্মকর্তা ইউনুস আর রাফি বলেন,এ ধরনের পন্য বিদেশে গেলে আমাদের দেশের সুনাম বাড়বে । দেশীয় পন্যের বিদেশের বাজারে রপ্তানী করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের এই কর্মকর্তা।


জেবি/এসবি