নাফনদীর ওপারে টানা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ আর আগুনের কুণ্ডলী
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮:৫২ অপরাহ্ন, ১৪ই জুলাই ২০২৪
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও দেশটির জান্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের জের ধরে একদিন বিস্ফোরণের বিকট শব্দ বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটা থেকে সন্ধ্যায় সাতটা পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর শুক্রবার (১২ জুলাই) সারাদিন কোনো ধরনের শব্দ শুনতে পাননি টেকনাফ সীমান্তের মানুষ।
কিন্তু শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল থেকে শুরু হওয়া বিকট শব্দ অব্যাহত রয়েছে রবিবার (১৪ জুলাই) বিকাল ৫ টা পর্যন্ত।
টেকনাফ সীমান্তের বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ থেমে থেমে ছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হওয়া বিস্ফোরণের শব্দ বিরতিহীন টানা। রবিবার বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এক মিনিট পর পর শোনা যাচ্ছে বিকট শব্দ। যে শব্দের সাথে সাথে দেখা যাচ্ছে ধোঁয়া ও আগুনের কুণ্ডলী। টেকনাফ সীমান্তের অন্তত ৫ টি পয়েন্টে দেখা মিলেছে এমন আগুনের কুণ্ডলী।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার পৌরসভার উন্নয়ন কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ জাইকা প্রধানের
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, শুক্রবার সারাদিন শান্ত থাকলেও শনিবার থেকে তা বেড়েছে ব্যাপক। রবিবার এসে তা বিরতিহীন বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। ওপারে কি হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। তবে এটা নিশ্চিত টানা বোমা এলাকার পর পর বিধ্বস্ত হচ্ছে। আর আগুনে পুঁড়ে যাচ্ছে এলাকার পর এলাকা। টেকনাফে জালিয়াপাড়ার উল্টোপাশে মংডুর সুধাপাড়া গ্রামের আশে-পাশের ৫/৬ টি পয়েন্ট থেকে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে।
সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া সূত্রের কথা উল্লেখ করে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, মিয়ানমারের মংডু শহরের আশপাশে ফয়েজিপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, সুধাপাড়া গ্রাম ছাড়া সব জায়গায় বিদ্রোহীরা দখল করেছে নিয়েছেন। সবশেষ গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার শাহপরীর দ্বীপের বিপরীতে মিয়ানমারের ফাতংজা চৌকিটি দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। ওই চৌকিতে থাকা মিয়ানমান বর্ডার র্গাড পুলিশ (বিজিপির ) প্রায় দুইশতাধিক সদস্যরা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। পালিয়ে আসা এসব বিজিপির সদস্যরা বডার গাড বাংলাদেশ (বিজিবি) হেফাজতে দমদমিয়া এলাকায় রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
টেকনাফ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, নাফনদী পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নাগরিকেরাও পালিয়ে আসছে। তারা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে রোহিঙ্গারা যাতে আর অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও কোস্টগাড সদস্যরা টহল জোরদার করেছেন।
আরও পড়ুন: নালার উপর সরকারি গণগ্রন্থাগার, রাস্তা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতি
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা সৈয়দ হোছাইন বলেন, রাতভর সীমান্তজুড়ে বিকট গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। এতে এখানকার বসবাসকারী মানুষের মাঝে আতঙ্ক বাড়ছে। এছাড়া সকাল থেকে সীমান্তের ওপাড়ে আগুন জ্বলছে। এভাবে চলতে থাকলে আবার রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে পারে।
সীমান্তের গোলার বিকট শব্দের কারনে নির্ঘুম রাতভর নির্ঘুম রাত কাটছে হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের সীমান্তের বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আবার দুই দিন ধরে সীমান্তে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া নাফনদের ওপাড়ে আগুন দেখা গেছে।
তবে এ সীমান্তে নিরাপত্তার দাযিত্বে থাকা টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো মহিউদ্দিন ও কোস্টগাড টেকনাফ ষ্টেশন কমান্ডারের সরকারি মুঠোফোন নম্বরের একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো আদনান চৌধুরী বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাকে জানিয়েছেন মংডুর সুধাপাড়া গ্রামে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
এমএল/