টানা বৃষ্টিতে পেকুয়ায় ১০ গ্রাম প্লাবিত
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, ১৯শে আগস্ট ২০২৪
টানা প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে কক্সবাজারের পেকুয়ায় ১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৫ একর ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৬ হাজার মানুষ। এছাড়া পানির চাপে দুইটি খালের চার পয়েন্টে বাধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। ফলে জোয়ার-ভাটায় পরিণত হয়েছে লোকালয়। ডুবে গেছে অনেক রাস্তাঘাট। পানিতে তলিয়ে গেছে ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সোমবার (১৯ আগষ্ট) বৃষ্টিতে পেকুয়ার টইটং ইউনিয়নের মালগারা, আলেকদিয়া পাড়া, বটতলী, হাবির পাড়া, বকশি মুড়া, মিছকিন্না ঘোনা, সোনাইয়া কাটা, শিলখালী ইউনিয়নের মাঝের ঘোনা, জারুলবনিয়া পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পুর্ব মেহেরনামা, উজানটিয়া ইউপির দক্ষিণ সুতাচুড়া কালার পাড়াসহ ১০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার মানুষের চলাফেরায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আরও পড়ুন: মহেশখালীতে পাহাড় ধসে নিহত ১
শিলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, ইউনিয়নে প্রায় ১০ টি ঘর পানিবন্ধী রয়েছে। তবে রাস্তা ঘাটের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় পানি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।
টৈটং এম ইউ পি ১ নং ওয়ার্ড আব্দুল জলিল বলেন, টইটং ইউনিয়ন ১,২,৩ ওয়ার্ডে বিভিন্ন জায়গা ব্যাপক পানি জমে আছে। ২০০ টি ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৫০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ডুবে গেছে বেশ কিছু পুকুর ও মাছের ঘের। এর আগে বন্যায় আমাদেরকে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রতিটি পরিবারকে দশ কেজি চাল দিয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় আমরা বিতরণ করতে পারিনি।
শিলখালী ইউনিয়নের কাছাড়িমোড়া ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ ফরিদ বলেন, টানা কয়দিনের ভারী বর্ষণে অসংখ্য বীজতলা ডুবে গেছে। ইতোমধ্যে ধানের বীজগুলোতে অঙ্কুরোদগমের আগেই পচন ধরেছে। পুণরায় বীজ কিনে চাষবাস করার সে সামর্থ্য অনেকের নেই। চরম বিপাকে পড়েছে স্থানীয় চাষীরা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির রাম রাজত্ব!
টৈটং ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান হাজী সাহাব উদ্দিন জানান, ভারি বর্ষণের কারণে ইউনিয়নের প্রায় একশো টি ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে ৮ টি রাস্তা। ছাড়া সংলগ্ন পানি চলাচলের ৪টি নাঁসি উপড়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাস্তাগুলো সংস্কারের নির্দেশ দিলেও প্রবল বৃষ্টির কারণে তা করা যাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছে ইউনিয়নের ৬ হাজার বাসিন্দা।
উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের ইউপি ইউনুস বলেন, গত চারদিন টানা বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন গ্রামে পানি উঠার সম্ভবনা রয়েছে তবে এখনো কোন জায়গা প্লাবিত হওয়ার ঘটনা ঘটে নেই। তবে আজকে টানা বৃষ্টি হলে প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই বেশি, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে পক্ষ থেকে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ধরে যাতায়াতের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে আছে। বাড়ি থেকে বের হওয়া যাচ্ছেনা। পাহাড়ী ঢল আর বৃষ্টির পানি আমাদের জনজীবন স্থবির করে ফেলেছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, টইটংয়ে অন্তত ৪টি পয়েন্ট পাহাড়ি ছড়ার বাধ ভেঙে গেছে। আমরা লিখিত ভাবে জানিয়েছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব রাস্তাগুলো মেরামত করা হবে। তবে এর আগে আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে পানিবন্দী পরিবারকে দশ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়ছে।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টি-বাতাসে ভেঙ্গে গেলো মেরিন ড্রাইভের বিদ্যুতের ২০ খুঁটি
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, সোমবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারে ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুধু মাত্র সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৫ মিলিমিটার।
তিনি জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে একই এলাকায় লঘুচাপ আকারে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরী অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর-দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর পুনঃ ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এমএল/