সীমান্তের ওপারে রাতভর বিস্ফোরণ, নির্ঘুম এপারের মানুষ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৫৬ অপরাহ্ন, ৩রা নভেম্বর ২০২৪


সীমান্তের ওপারে রাতভর বিস্ফোরণ, নির্ঘুম এপারের মানুষ
সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্তের ওপারে ৩০ কিলোমিটার জুড়ে রাতভর মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টারশেল, বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে সীমান্তে বসবাসকারীরা।

শনিবার (২ নভেম্বর) রাত ৮টা থেকে শুরু হওয়া বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে রবিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত। বিস্ফোরণের শব্দের সাথে কেঁপে উঠে টেকনাফের হ্নীলা, পৌরসভা, টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের বসতবাড়িও।


আরও পড়ুন: টেকনাফে গ্রেনেড, রকেট বোম্ব, গুলিসহ আটক ১


টেকনাফের একাধিক জনপ্রতিনিধি, সীমান্ত এলাকার মানুষ এসব তথ্য জানিয়েছেন। সীমান্তবাসির প্রশ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য কি একদিনে বিধ্বস্ত হয়ে গেলো?


টেকনাফের হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী, টেকনাফ সদরের ইউপির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান  ও সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।


এই তিন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, নাফ নদীর ওপারে টেকনাফ সীমান্ত এলাকাজুড়ে থেমে থেমে ভেসে আসছে মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ। যার কারণে সীমান্তের বাসিন্দাদের আবার নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ।  শনিবার রাত ৮টা থেকে রবিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত  মংডু শহরের উত্তর ও দক্ষিণে আশেপাশের এলাকায় যুদ্ধ বিমান চক্কর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। বোমার কাপুনিতে টেকনাফের হ্নীলা, পৌরসভা, টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়ন শাহপরীর দ্বীপের বসতবাড়ি কেঁপে উঠছে। ওইসব এলাকার মানুষজনকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে।


আরও পড়ুন: টেকনাফের ‘স্বঘোষিত ইয়াবা কারবারি’ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা


এই তিন চেয়ারম্যান বলেন, প্রায় নয় মাস ধরে এলাকার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তবে শনিবার রাত থেকে আজ রবিবার পর্যন্ত বিমান যোগে বোমা নিক্ষেপ করার বিষয়টি খুব ভয়াবহ ছিল। এমন টানা বিস্ফোরণ আর শোনা যায়নি। এমনকি বিস্ফোরণের শব্দও আগের তুলনায় অনেক ব্যাপক এবং ভয়াবহ।


হ্নীলার দমদমিযা এলাকায় বাসিন্দা আমানুল্লাহ ও সাবরাং লেজিরপাড়ার আব্দুল হামিদ বলেন, দীর্ঘ নয় মাস ধরে টানা মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতা কামী সশস্ত্র গোষ্ঠীর যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে চললেও গত রাতের মতো বোমা নিক্ষেপ এর ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বিমান দিয়ে বোমা নিক্ষেপের কারণে টেকনাফ সীমান্তের বসবাসকারী মানুষকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। বোমার আঘাতে এবারের মানুষের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। সারারাত বোমা ও বিমানের বিকট শব্দে এপারে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।


সীমান্ত এলাকার মানুষ জানিয়েছে, টেকনাফ, উপজেলার পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া,নাইট্যংপাড়া , পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ সহ, নাফ নদীর মোহনা সীমান্ত থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বড় বড় বিকট শব্দ।


টেকনাফ নাইট্যংপাড়া বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে রাতভর ভেসে আসছে বিস্ফোরণের    বিকট শব্দ। মনে হচ্ছে মর্টারশেল বোমার আওয়াজ।


শাহপরীরদ্বীপ বাসিন্দা মোঃ ইসমাইল ভোরে জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে ৫-১০ মিনিট পরপর মর্টারশেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে আমরা এখনো না ঘুমিয়ে বসে আছি । কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আজকে সারারাত থেমে থেমে বিস্ফোরণ হচ্ছে। রাত ৯ থেকে বিকট শব্দ শুরু হয়েছে।


আরও পড়ুন: টেকনাফে অপহৃত যুবক ৩দিন পর উদ্ধার, চাচাসহ গ্রেফতার ৩


হ্নীলা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, রাত সাড়ে ৯ টার পর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টারশেল বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সীমান্তের বাসিন্দারা আমাকে জানিয়েছে। সারারাত থেমে থেমে বিকট শব্দ শুনা যাচ্ছে। আমার বাড়িতে ও বিকট শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।


মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে কোনো রোহিঙ্গা নাগরিক যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।


এসডি/