স্ত্রীর কবরের পাশে ১৮ বছর ধরে কোরআন তেলাওয়াত করছেন স্বামী


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৪১ অপরাহ্ন, ১২ই নভেম্বর ২০২৪


স্ত্রীর কবরের পাশে ১৮ বছর ধরে কোরআন তেলাওয়াত করছেন স্বামী
ছবি: প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট সদর ইউনিয়নের চান্দামারী গ্রামের সাবেক শিক্ষক এটিএম মোস্তফা কামাল (৭৪)। তার স্ত্রী রেখা বেগম মারা গেছেন ১৮ বছর আগে। এই ১৮ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে বসে কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া-দরুদ ও পত্রিকা পড়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।


আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বাস চাপায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল চালকের


 জানা গেছে, স্ত্রীর প্রতি অসীম ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাবেক এ শিক্ষক। প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর পরে তার কবরের পাশেই বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে আসছেন। এটিএম মোস্তফা রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি অবসরে যান। ২০০৬ সালের ১৪ নভেম্বর তার স্ত্রী রেখা বেগম (৪৩) বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রীকে বাড়ির প্রবেশ পথে রাস্তার পাশে সমাহিত করা হয়।


পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এটিএম মোস্তফা এবং রেখা বেগমের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত ভালো ছিল। বিয়ের পর একে-অপরকে ছেড়ে কখনো রাতও কাটাননি তারা। রেখা বেগম স্বামীর সেবা-যত্নে কখনো কোনো ত্রুটি করেননি। পাশাপাশি স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে ভালোবাসা ও সাংসারিক কাজে সব সময় সহযোগিতা করেছেন মোস্তফা। এই দম্পতির ঘরে দুই সন্তান রয়েছে। ছেলে রাজীব ফেরদৌস শুভ্র ও কন্যা রুবাইয়া সুলতানা বিবাহিত। 


ছেলে শুভ্র বলেন, মায়ের মৃত্যুর ১৮ বছর পার হতে চলছে। বাবা মাকে এক দিনের জন্যও ভুলতে পারেননি। মনে হয় কয়েক দিন আগে মা মারা গেছেন। তিনি আরও বলেন,পারিবারিক কাজে বাবা কখনো বাজারে গেলেও দ্রুত কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসেন। ঘুরে-ফিরে আবার মায়ের কবরের কাছে বসেন। রাত জেগে নামাজ এবং কোরআন তেলাওয়াত করে মায়ের জন্য দোয়া করেন। 


আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ফিরলো রমনা মেইল ট্রেন


উপজেলার নওদাবস উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোবাশ্বের আলম লিটন বলেন, স্যার সম্রাট শাজাহানের মতো মৃত স্ত্রীর জন্য তাজমহল নির্মাণ করতে পারেননি। তবে হৃদয়ে স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসার দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এটিএম মোস্তফা বলেন, স্বামী জীবিত অবস্থায় স্ত্রীর মৃত্যুতে অন্যদের ক্ষেত্রে কেমন হয় জানি না। তবে আমার স্ত্রীর (রেখা বেগম) মৃত্যুর পর প্রতিটি দিন-রাত আমার কাছে অপূর্ণ মনে হয়। তাকে আমি ভুলতে পারি না। তার মৃত্যুর পর আমি প্রতিদিন ফজরের নামাজের আগে ও পরে এবং অন্যান্য সময় মিলে ১২৯ বার কোরআন খতম করেছি। আমি সব সময় আল্লাহর কাছে তার জন্য জান্নাত প্রার্থনা করি।


এসডি/