নতুন বছর উদযাপন নিয়ে জয়া আহসানের সতর্কবার্তা
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০১ অপরাহ্ন, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৪
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সবাই কমবেশি অপেক্ষায় থাকে। তবে ৩১ ডিসেম্বরের (থার্টি ফাস্ট) নাইটের জন্য অনেকে আতঙ্কের মাঝেও কাটান। এই রাতে শ্রবণজনিত সমস্যা থেকে শুরু করে মানসিক ব্যধিরও শিকার হয় অনেক মানুষ। বিশেষ করে বছরের শুরুর দিনে রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় অসংখ্য পশু-পাখির মরদেহ! বিষয়টি নিয়ে সরকার থেকে শুরু করে বহু সামাজিক কিংবা প্রাণী কল্যাণ সংগঠনগুলো বিশেষ সচেতনতার বার্তা দিচ্ছে। নিজ উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আতশবাজি-ফানুস তাণ্ডবের ভয়াবহতা তুলে ধরতে দেখা গেল জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা জয়া আহসানকে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্ট লেখেন এই অভিনেত্রী। সেখানে উঠে আসে- নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে প্রাণিহত্যার দিকটিও। সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এই হত্যার দায় নিজেদের বলেও সতর্ক করেন জয়া আহসান।
আরও পড়ুন: আইকনিক পেইন্টিংয়ে মুগ্ধতা ছড়ালেন জয়া আহসান
জয়া লেখেন, ‘মানুষদের মতো পাখিদের কোনো নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার নেই। তারা থার্টি ফার্স্ট চেনে না। অন্য আর দশটা সন্ধ্যার মতোই তারা ফিরে যায় যে যার আপন নীড়ে, রাতে ঘুমিয়ে পরদিন সকালে উঠে আবার কিচিরমিচির করবে বলে। কিন্তু সেই রাতে কী যেন হয় মানুষের। তারা ঘুমায় না। তীব্র হট্টোগোল শুরু হয়, যেন যুদ্ধ! বিকট শব্দে পাখিদের ঘুম ভেঙে যায়। তারা দেখে আকাশে শত শত ফানুস উড়ছে। হঠাৎ একটা ফানুস এসে পুড়িয়ে দেয় গাছে থাকা সমস্ত পাখির বাসাগুলো। কেউ কেউ পুড়ে মরে, কেউবা আতঙ্কিত হয়ে আকাশে উড়াল দেয়। কিন্তু সে রাতে আকাশটাই তো নিরাপদ না।’
এরপর তিনি আরও লেখেন, ‘কোনো কোনো পাখি মারা পড়ে তীব্র শব্দে, আবার কারও শরীরে লাগে আতশবাজি। এরপরও যেসব ভাগ্যবান পাখি তখনও বেঁচে থাকে, তাদের কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে বিল্ডিংয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রাণ হারায়।’
অভিনেত্রী লেখেন, ‘জানি এই শহরে প্রচুর মানুষও মারা যায়, কারও কারও কাছে পাখির মৃত্যু আদিখ্যেতা মনে হতে পারে। কিন্তু মানুষের মৃত্যু দেখার জন্য তো সংস্থা আছে, সংখ্যা হিসাব করার প্রতিষ্ঠান আছে। আছে আহত মানুষের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল। কিন্তু পাখিদের এসব কিছুই নেই। তাই পাখিরা মারা গেলে ডেথ সার্টিফিকেট হয় না, জানা যায় না মৃত্যুর কারণ। এমনকি মৃত পাখিদের সংখ্যাটাও আমরা কেউ জানি না। ফলে এই শহরের মতোই পাষণ্ড নাগরিকেরা ভাবে, পাখির মৃত্যু? ও আর এমন কী বিষয়! কিন্তু মানুষ কেন ভাবে না যে প্রতিটি প্রাণের গুরুত্বই সমান!’
আরও পড়ুন: ছয় মাস লেগেছে জয়ার ঢাকাই জামদানি বানাতে
আতশবাজির শব্দে শিশু উমায়েরের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে জয়া লেখেন, ‘শুধু পাখির কথা কেন, এই শহরের কুকুর-বিড়াল-মুরগী-কীটপতঙ্গসহ সবাই-ই অস্থির হয়ে যায় নগরবাসীর আতশবাজি আর ফানুস উৎসবের কারণে। এমনকি ডিমের ভেতর বাচ্চা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। আর মানুষ? তারা তো মানুষের কথাও কখনোই ভাবে না।
২০২২-এর জানুয়ারির ১ তারিখ যখন নগরবাসী সারারাত আতশবাজি উৎসব করে ঘুমাচ্ছে তখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিল ৪ মাস বয়সী শিশু উমায়ের। একসময় সে পরাজিত হয় এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ছোট্ট উমায়েরের এই মৃত্যুর দায় কেন এই নগরবাসী নেবে না? আপনারা যারা আতশবাজি ফুটিয়েছিলেন তারা কেউ কি এই দায় থেকে মুক্ত?’
সবশেষে জয়া ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘এ বছরও হয়ত আপনারা আতশবাজি আর ফানুসের ঝলকানিতে নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। উৎসবের নামে এই তাণ্ডবলীলা চালানোর সময় কি এই অসহায় কুকুর-বিড়াল-পাখিসহ অসহায় প্রাণীদের করুণ মুখগুলো আপনাদের মনে পড়বে? আপনাদের কি মনে পড়বে শিশু উমায়েরের নিষ্পাপ মুখটির কথা? যদি এদের কারও কথা আপনার মনে না পড়ে, অথবা মনে পড়ার পরও যদি আতশবাজি আর ফানুসের তাণ্ডব চালিয়ে যান, তাহলে জেনে রাখুন, এই প্রাণীহত্যার দায় আপনারও।’
এমএল/