টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না ফরিদা পারভীনের, যা বললেন ছেলে
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ০১:২১ অপরাহ্ন, ৭ই জুলাই ২০২৫

দেশবরেণ্য লালন-সম্রাজ্ঞী, একুশে পদকপ্রাপ্ত লোকসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন গুরুতর অসুস্থ। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই কিংবদন্তি শিল্পী দীর্ঘদিন ধরেই লিভার, কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন। বর্তমানে তিনি নিয়মিত ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, অর্থের অভাবে ফরিদা পারভীন উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এ খবরে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন তার পরিবার। বিষয়টি ‘ভুল ও সম্মানহানিকর’ বলেও উল্লেখ করেছেন শিল্পীর সন্তান ইমাম ফাজর নোমানী।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আম্মার চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু মা সম্মানের জায়গা থেকে তা নিতে রাজি হননি। বরং বলেছেন, এই অনুদান যেন দুস্থ শিল্পীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়।”
নোমানী বলেন, ২০১৯ সাল থেকে ওনার (ফরিদা পারভিন) কিডনির সমস্যা। অনেকদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়ালাইসিস শুরু হওয়ার পর থেকে তার শরীরটা খারাপ। এখন সব রকম চিকিৎসা চলছে। ওনার অসুস্থতার কথা জানার পর উপদেষ্টারা অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের বলা হয়েছে আর্থিক সহায়তা লাগবে কি না? মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্য করতে চাওয়ার বিষয় জানতে পারলে আমার আম্মা (ফরিদা পারভীন) বলেছেন, সে কোনো অনুদান নিতে রাজি হননি।
ফরিদা পারভীনের ছেলে যোগ করেন, মা জানিয়েছেন চিকিৎসার খরচ বহন করার মতো সক্ষমতা আমার পরিবারের আছে। তিনি (ফরিদা পারভীন) প্রস্তাব দিয়েছেন, সরকার যে অনুদানটা তাকে দিতেন সেটা অসহায় ও দুস্থ শিল্পী যারা আছেন তাদেরকে দেওয়ার জন্য বলেছেন। আর্থিক অনুদান না নেওয়ার বিষয়টা খুব সম্মানের সঙ্গে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
নোমানী আরও বলেন, আমাদের জায়গা থেকে আম্মার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার জন্য যথেষ্ট সামর্থ্য আছে। তাছাড়া আমরা যদি ব্যয়ভার বহন নাও করি। আম্মার নিজের অর্থ দিয়ে নিজের চিকিৎসা করার সামর্থ্য আছে।
অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না গুণী এ সংগীতশিল্পী এমন খবরে বিব্রত ফরিদা পারভীনের পরিবার। এই প্রসঙ্গে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে নোমানী বলেন, যারা বিভিন্ন কথা ছড়াচ্ছেন তারা আম্মাকে কতটা সম্মান ও ভালোবাসেন তা আমার জানা নেই। তারা যদি সত্যি আম্মাকে সম্মান করতেন তাহলে এভাবে সম্মান নষ্ট করতেন না। বিভ্রান্তিকর নিউজগুলো যখন তার সামনে আসে তখন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সংবাদগুলোর প্রভাব সরাসরি আম্মার ওপরেও পড়ছে। সে তো এগুলো নিতে পারছেন না। তার আত্মসম্মানের জায়গাটা তিনি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেন। অসুস্থ অবস্থায় পরিচিত কারও থেকে এধরণের কথা জানতে পারলে বেশি অসুস্থ হয়ে যান।
শুভানুধ্যায়ীদের কাছে ফরিদা পারভীনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে তার ছেলে নোমানী বলেন, বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন করে ডায়ালইসিস চলছে। গত কয়েদিনের তুলনায় এখন বেশি অসুস্থ। ডাক্তাররা যাবতীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ফরিদা পারভীন ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে নজরুলসংগীত গাওয়ার মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর তিনি লোকগানের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৮৭ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ২০০৮ সালে জাপানের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার প্রাইজ’সহ বহু সম্মাননা অর্জন করেন।
এসডি/