শেখ হাসিনার ওপর অনেকগুলো পিএইচডি হওয়া উচিত: আইন উপদেষ্টা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:১০ পিএম, ৪ঠা আগস্ট ২০২৫


শেখ হাসিনার ওপর অনেকগুলো পিএইচডি হওয়া উচিত: আইন উপদেষ্টা
ছবি: সংগৃহীত

আইন ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নিউরোলজিক্যাল,সাইকোলজিক্যাল, ফিজিক্যাল এমন অনেকগুলো পিএইচডি হওয়া উচিত।  তার মতে, শেখ হাসিনা ‘রাষ্ট্র’ ধারণাটিই বোঝেননি।


সোমবার (০৪ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’-শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনাকে নিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।


বিগত সরকারের বিতর্কিত তিন নির্বাচনের সমালোচনা করে আসিফ নজরুল বলেন, আগে নির্বাচন হতো, নির্বাচনে কারচুপি হতো। শেখ হাসিনা আগের সব কারচুপির মাত্রা ছাড়িয়ে গেছেন। ২০১৪ সালে উনি নির্বাচন হওয়ার আগেই সংসদ নির্বাচিত হয়ে গেছেন। ১৫৩টা আসনে নির্বাচনের আগে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। সারা পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম ভূতুড়ে নির্বাচন হয়নি। মানুষ কি পরিমাণ বিক্ষুব্ধ হয়েছে। তখনও তিনি প্রায় শ’খানেক লোক হত্যা করেছেন, ১৪ নির্বাচনের পর।


আরও পড়ুন: স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা অভ্যুত্থানের লক্ষ্য: ড. ইউনূস


আইন উপদেষ্টা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম নজীর নাই। দিনের বেলা হয়, কিন্তু আগের রাতে ভরে রাখার ঘটনা নাই। ২৪ তো পাতরামির নির্বাচন। পরপর তিনটা নির্বাচন করেছে এ রকম, এ রকম ইতিহাস উপমহাদেশে এ রকম কারও আছে? নর্থ কোরিয়ার দুই একটা দেশ পাবেন, কোনো সামরিক শাসনের আছে? মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা করা হয়েছে, বলেছে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।


আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার মাত্রা সর্বোচ্চ অপরাধ। পরপর তিনবার তথা ১৫ বছর বাংলাদেশের মানুষকে ভোট দিতে দেননি এবং কোনো রকমের অনুশোচনা নাই। এমন একটা অবস্থা, মিথ্যা যে এত কনফিডেন্টের সঙ্গে বলতে পারে, ওনাকে দেখে বিস্ময় আমার কখনো শেষ হয় না; কখনো শেষ হবে না।


তিনি বলেন, শেখ হাসিনা শুধু মিথ্যা কথা বলে নাই, পুরো একটা জাতির মধ্যে ফরেন সার্ভিস বলেন, পুলিশ বলেন, জুডিশিয়ারি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বলেন সমস্ত জায়গায় একটা মিথ্যাবাদী প্রজন্ম তৈরি করতে পেরেছিল। ওনার ওপর একটা নিউরোলজিক্যাল,সাইকোলজিক্যাল, ফিজিক্যাল ডিটেইল ডিটেইল অনেকগুলো পিএইচডি হওয়া উচিত। একটা মানুষ কীভাবে এটা করতে পারে। রাষ্ট্র কনসেপ্টই বুঝত না এই মহিলা।


আরও পড়ুন: ড. ইউনূস-আনোয়ারের সম্পর্ক কাজে লাগাতে চায় ঢাকা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা


২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রত্যেকটা মানুষ নেতা ছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে প্রত্যেকটা মানুষ নিজ সিদ্ধান্তে আসছে। প্রত্যেকটা মানুষ নেতা ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের রূপকার ছিল বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ। প্রত্যেকে নিজে নিজে আন্দোলনে আসছে। সহ্য করতে পারে নাই মানুষ। এতদিনের রাগ সেটা প্রকাশ করতে দেয় নাই।


রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলতে গিয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, সুন্দর সংবিধান থাকার পরও জঘন্য রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। মালদ্বীপ, তিউনিসিয়া উদাহরণ। যত ভালো আইন বানানো হোক না কেন আইন, সংবিধান সবইতো থাকবে। কিন্তু আমাকে তো এটা ইন্টারনালাইজ করতে হবে। ভালো কথা তো কোরআন শরিফে আছে, এজন্য কি এ পৃথিবীর মানুষ কি মানুষ হয়েছে? আমরা কি আসলে মুসলমান হয়েছি। এটা তো ইন্টারনালাইজ করতে হবে, বুজতে হবে। আমাদের নিজেদের ভালো হইতে হবে, নিজেদের সংস্কার করতে হবে।


আইন উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার আমলে যে ভাইব ছিল- একটা মালিকানার রাজনীতি ট্যাগ দেওয়ার রাজনীতি, অসহিষ্ণুতা, মিথ্যাচার-এগুলো কি দূর করেছি? এগুলো কি দূর করতে পেরেছি? এগুলো দূর করতে হলে আমাদের সংবিধান তৈরি করতে হবে? সত্যি কথা বলার জন্য কি সংবিধান লাগবে? মিথ্যা ট্যাগ দেওয়ার জন্য কি সংবিধান লাগবে? এসব করতে গেলে সুশিক্ষা লাগে, ভালো মানুষ হইতে হয়।


তিনি বলেন, সবাই সংবিধান সংবিধান করেন। আমার কাছে মনে হয়, ভালো সংবিধান অবশ্যই প্রয়োজন, ভালো আইন প্রয়োজন। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার প্রয়োজন। নিজের অন্তদৃষ্টি প্রয়োজন, আত্মসমালোচনা প্রয়োজন। এগুলা থাকলে আমরা আস্তে আস্তে সামনে আগাতে পারব।


এমএল/