দিল্লিতে শেখ হাসিনার বাসভবন ঘিরে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৩ পিএম, ১লা সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির অভিজাত লুটিয়েন্স বাংলো জোনে অবস্থান করছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একই এলাকার একটি দোতলা ভবন থেকে পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (সিআরআই)। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব এখন তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের হাতে—সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিরুদ্ধে একের পর এক সাইবার আক্রমণের পেছনে কাজ করছে সিআরআই। এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে তৈরি ভিডিও, বেনামি ফেসবুক-ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এই কার্যক্রম। মূলত প্রোপাগান্ডা চালিয়েই জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সিআরআই তিনটি লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে—
১. অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা,
২. যেকোনো মূল্যে জাতীয় নির্বাচন ভন্ডুল করা,
৩. বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি এবং অভ্যুত্থানপন্থী শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ ঘটানো।
এই পরিকল্পনার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরানোই চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে জানা গেছে। এজন্য দেশ-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬৩ লাখ : ইসি
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার কারণে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পক্ষে আর সিআরআই’র কার্যক্রম দেখা সম্ভব নয়। এ কারণে হাসিনার নির্দেশে দায়িত্ব পান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি বর্তমানে দিল্লির ওই কার্যালয় থেকেই সিআরআই’র কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
গত ১১ জুলাই দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক পদ থেকে ছুটিতে পাঠানো হয় পুতুলকে। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে।
অভিযোগ রয়েছে, গবেষণা ও প্রচারণার নামে এখন সিআরআই ভিন্নধর্মী কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় থেকে বাছাই করা সাংবাদিক, ইউটিউবার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে নানা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে সংঘাত-সহিংসতা উসকে দেওয়া, বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের নতুন করে সংগঠিত করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
এর অংশ হিসেবে প্রজন্ম ৭১, জয়বাংলা ব্রিগেড, ব্রিগেড ৭১, নয়া সংগ্রাম ২৫–এর মতো শতাধিক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির ৪ নেতা
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০১০ সালে সিআরআই’র যাত্রা শুরু হয়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ছিল এর আনুষ্ঠানিক ঠিকানা। তবে বাস্তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে গোপনে পরিচালিত হতো কার্যক্রম।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর একসময় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম স্তব্ধ হয়ে পড়ে। তবে গত তিন মাস ধরে আবার নতুন করে সক্রিয় হয়েছে সিআরআই।
আরএক্স/