মিম কিং আমির লিয়াকত মারা গেছেন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মিম কিং আমির লিয়াকত মারা গেছেন

পাকিস্তানের টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও সাবেক সাংসদ আমির লিয়াকত হোসেন মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে তাকে নিজ বাসায় অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়, পরে হাসপাতালে নেওয়া হরে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বিবিসির প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।

পাকিস্তানের চর্চিত সাংসদ আমির লিয়াকত হোসেনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া পাকিস্তানে। এই নামটির সঙ্গের আপনি হয়তো না-ও পরিচিত হতে পারেন। কিন্তু তাঁর চেহারা নিশ্চয়ই আপনার কাছে অপরিচিত নয়। যেকোনো মজার ভিডিওতে তাঁর 'বাহ, বাহ!' উচ্চারণ করা অংশ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর মিম ও তাঁর স্থিরচিত্র ব্যবহার করা হয়। ৩১ বছরের ছোট দানিয়া মালিককে বিয়ে করে চর্চার কেন্দ্রে এসেছিলেন তিনি। দানিয়া ডিভোর্সের আবেদন করায় ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে লিয়াকতের নাম। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন লিয়াকত। তার কারণ অবশ্য ভিন্ন। তাঁর একাধিক প্রতিক্রিয়ার মিম তৈরি হতো। পাকিস্তানে প্রথমে জনপ্রিয় হয় আমির লিয়াকতের মিম। পরে ভারত সহ বিশ্বের বেশ কিছু অংশে ছড়িয়ে পড়ে সেই মিম। ফলে সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেন আমির।

প্রয়াত পাকিস্তানের সাংসদ আমির লিয়াকত হুসেইন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৯। জানা গিয়েছে, বাড়িতে আচমকাই সংজ্ঞা হারান সাংসদ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আগা খান ইউনিভার্সিটি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি। পাকিস্তানের একাধিক মজাদার মিমে তাঁর মুখ দেখা যেত। মিমারদের কারণেই বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন আমির। 

বৃহস্পতিবার পিটিআই নেতা জামাল সিদ্দিকী জানিয়েছেন, “আমিরের এক কর্মচারী সাংসদের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন তাঁকে। তবে ঠিক কী কারণে পাকিস্তানের এই রাজনীতিকের মৃত্যু হল তা এখনও পরিষ্কার নয়।” 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব। পাকিস্তানি মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বুধবার রাত থেকেই অসুস্থ বোধ করছিলেন সাংসদ। কিন্তু, হাসপাতালে যেতে চাননি তিনি। গভীর রাতে আচমকা তাঁর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন কর্মচারী জাভেদ। অনেক ডেকেও সাড়া না মেলায় দরজা ভেঙে তাঁর সংজ্ঞাহীন দেহ উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার পারভেজ আশরাফ এদিন হাউজে শোকপ্রকাশ করেন। শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হাউজের কার্যপ্রণালীতে বিরতি ঘোষণা করেছেন পাক স্পিকার।

পাকিস্তানের পুলিশের তরফেও সাংসদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে, সাংসদের মরদেহ জিন্নাহ হাসপাতাল বা সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে। সেখানেই ময়নাতদন্ত চলবে। তারপর আমিরের পরিবারের হাতে তাঁর দেহ তুলে দেওয়া হবে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ এও জানিয়েছে যে সাংসদের মৃত্যুর ঘটনায় সন্দেহজনক কোনও বিষয় নেই।

২০১৮ সালে পিটিআই এ যোগ দিয়েছিলেন আমির। ওই বছরই করাচি থেকে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। সাধারণের রায়ে এমএনএ নির্বাচিত হন ওই বছর। পিটিআই এ দেওয়ার আগে আমির এমকিউএম’ র সদস্য ছিলেন। জেনারেল পারভেজ মুশারফের সময় তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তার আগে অবশ্য বেশ কিছু বছর পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি।

সাংসদের অকালমৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, সিন্ধের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, পিপিপি চেয়ারপার্সন এবং পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সহ বিশিষ্টরা।

ওদিকে তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে এরই মধ্যে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। করাচিতে খুদাদাদ কলোনিতে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায় তারা। এসএসপি ইস্ট বলেছেন, কী কারণে তিনি মারা গেছেন তা নিশ্চিত হতে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করবে। রহস্যজনক কারণে তিনি মারা যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে আমির লিয়াকতের ব্যক্তিগত জীবন বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। তিনবার বিয়ে করেছিলেন তিনি। তবে ১৮ বছর বয়সী দানিয়া মালিককে বিয়ের পর, চর্চার কেন্দ্রে চলে আসে লিয়াকতের জীবন। সম্প্রতি তাঁর তৃতীয় পত্নী দানিয়া মালিক ডিভোর্সের আবেদন করেছিলেন। আলাদাও থাকতে আরম্ভ করেছিলেন তাঁরা।

এসএ/