শুভ জন্মদিন 'নায়করাজ' রাজ্জাক
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
বিনোদন প্রতিবেদক: বাংলা চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তি নায়ক
ছিলেন রাজ্জাক। যিনি নায়করাজ রাজ্জাক নামে সুপরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্র পত্রিকা চিত্রালীর
সম্পাদক আহমদ জামান চৌধুরী তাকে নায়করাজ উপাধি দিয়েছিলেন।
নায়করাজ
রাজ্জাকের ৮১তম জন্মদিন আজ। তবে দিনটি ঘিরে বিশেষ কোনো আয়োজন থাকছে না বলে জানিয়েছেন
প্রয়াত রাজ্জাকের পরিবারের সদস্যরা।
নায়করাজের
ছোট ছেলে সম্রাট জানান, তার বাবার কবর জিয়ারত, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলের মধ্য
দিয়ে জন্মদিন পালন করবেন তারা।
তিনি
বলেন, ‘প্রতি বছর আব্বার জন্মদিনে পরিবারের পক্ষ থেকে অসহায়, এতিমদের খাওয়ানো হয়ে থাকে।
এ ছাড়াও মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন হয়ে থাকে। আব্বার মৃত্যুর পর থেকে একটি মাদ্রাসায়
প্রতি মাসে তার নামে অর্থ সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিশেষ দিনগুলোয় খাবার ও পোশাক
দেওয়া হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।’
তিনি
আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্রের এই ক্রান্তিকালে আব্বাকে খুব মিস করি। সবার দোয়া চাই, আল্লাহ
যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।’
১৯৪২
সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাজ্জাক।
পারিবারিক নাম আব্দুর রাজ্জাক। কলকাতার থিয়েটারে অভিনয় করার মাধ্যমে রাজ্জাক তার অভিনয়
জীবনের শুরু করেন।
সিনেমার
নায়ক হওয়ার অদম্য স্বপ্ন ও ইচ্ছা নিয়ে রাজ্জাক ১৯৫৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ের ফিল্মালয়তে
সিনেমার ওপর পড়াশুনা ও ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। এরপর কলকাতায় ফিরে এসে শিলালিপি ও আরও
একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। তবে ১৯৬৪ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কবলে পড়ে রাজ্জাক
তার পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য হন। তৎকালীন প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় এসেও
রাজ্জাক চলচ্চিত্রের নায়ক হওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন-তবে প্রথমেই এতে সফলতা না পেয়ে
সিনেমার একজন সহকারী পরিচালক হিসেবে ‘উজালা’ ছবিতে পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারি
হিসেবে কাজ শুরু করেন।
’৬০-এর দশকে সালাউদ্দিন পরিচালিত হাসির ছবি ‘তেরো নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’-এ একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রাজ্জাক ঢাকায় তার অভিনয় জীবনের সূচনা করেন। এরপর প্রতিভাবান পরিচালক জহির রায়হান তার লোক ছবি ‘বেহুলা’তে রাজ্জাককে লখিন্দরের ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ করে দেয়ার মধ্যদিয়ে প্রথম নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। ‘বেহুলা’ ছবিতে সুচন্দার বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি।
এরপর
আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাজ্জাককে। ৬০-এর দশকের শেষ থেকে ’৭০ ও ’৮০-এর দশকে জনপ্রিয়তার
তুঙ্গে ওঠেন রাজ্জাক-অভিনয় করেন ৩ শ’-এরও বেশি চলচ্চিত্রের নায়কের ভূমিকায়।
রাজ্জাক অভিনীত জননন্দিত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল আকাশের নীচে, ময়নামতি, মধু মিলন,
পীচ ঢালা পথ, যে আগুনে পুড়ি, জীবন থেকে নেয়া, কী যে করি, অবুঝ মন, রংবাজ, বেঈমান, আলোর
মিছিল, অশিক্ষিত, অনন্ত প্রেম, বাদী থেকে বেগম ইত্যাদি।
দীর্ঘ
ও বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে রাজ্জাক-সুচন্দা, রাজ্জাক-কবরী ও রাজ্জাক-শাবানা ও রাজ্জাক-ববিতার
অনেক সিনেমা দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং যা রাজ্জাককে ঢালিউডের নায়ক রাজ উপাধিতে
ভূষিত করেছে।
কিংবদন্তী
এ অভিনেতা পাঁচবার সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। এছাড়াও
শিল্প-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে স্বাধীনতা পদক পুরস্কারে
ভূষিত হন তিনি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ‘কার্তুজ’ চলচ্চিত্রে দেখা গিয়েছিল তাকে। এরপর
জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে যান এই গুণী অভিনেতা।
ওআ/