মাছ-মুরগির দামে অস্থিরতা, শুক্রবার এলেই বাড়ছে চাপ ক্রেতার পকেটে

সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি মিললেও রাজধানীর মাছ ও মাংসের বাজারে দামের আগুন থামছেই না। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি, পাঙাশ ও তেলাপিয়ার মতো সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের খাবারগুলোও দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরবরাহ কমানোর অজুহাতে প্রায় প্রতি শুক্রবারই বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছ-মাংসের দামে নতুন করে চড়া সুর। এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ টাকায়। সোনালি মুরগির দামও ২৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮০ টাকা। তবে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও বিক্রেতাদের দামের অজুহাত মেনে নিতে নারাজ অনেক ক্রেতা।
বাজার করতে আসা আব্দুল ওয়াদুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতি সপ্তাহে যদি এভাবে দাম বাড়ে, তাহলে মুরগিও আর খাওয়া যাবে না। গরুর মাংস কেনা যায় না, ভালো মাছও হাতের বাইরে, এখন মুরগিও বাদ দিতে হবে।”
বিজ্ঞাপন
গরুর মাংসের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিপ্রতি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খাসির মাংসের দাম এখনও আকাশচুম্বী, প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা। বিক্রেতাদের দাবি, জোগান কম থাকায় দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
মাছের বাজারে ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। এক মাসে মাছের দাম কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাঝারি ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২,৩০০ থেকে ২,৫০০ টাকায়। ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ মিলছে ১,৭০০-১,৮০০ টাকায়। ছোট আকারের ইলিশ (৪-৫টি মিলে এক কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। অন্য মাছের মধ্যে রুই ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০-২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা, বাইলা ৮৫০ টাকা, টেংরা ৮০০ টাকা ও চিংড়ি কেজিপ্রতি ১,০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইলিশ বিক্রেতা আব্দুল কাদের বলেন, “সরবরাহ কম, আবার রপ্তানির চাপও আছে। তাই দাম বাড়ছে।”
বিজ্ঞাপন
ডিমের বাজারে সামান্য স্বস্তি মিলেছে। বাদামি ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫০ টাকা থেকে নেমে এসেছে ১৪০ টাকায়। তবে ক্রেতারা অভিযোগ করেন, দাম বাড়ানো দ্রুত কার্যকর হলেও কমতে সময় লাগে অনেক বেশি।
শ্যামবাজারে দিনমজুর ছলেমান মিয়া বলেন, “গরুর মাংস কিনতে পারি না, খাসি তো স্বপ্নের মতো। এখন মাছও হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাচ্চাদের জন্য মাঝে মাঝে মুরগি কিনতাম, সেটাও এখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”
বিজ্ঞাপন
সরকারি চাকরিজীবী সেলিনা আক্তার বলেন, “বাজারে দরদামের কোনো সুযোগ নেই। বিক্রেতারা যা বলেন, তাই দিতে হয়। খেটে-খাওয়া মানুষের জন্য সংসার চালানো দিন দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে।”