Logo

নোবেলের জন্য মরিয়া ট্রাম্প, কতটা সম্ভাবনা আছে পাওয়ার?

profile picture
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৭ অক্টোবর, ২০২৫, ২১:১৯
12Shares
নোবেলের জন্য মরিয়া ট্রাম্প, কতটা সম্ভাবনা আছে পাওয়ার?
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আগামী শুক্রবার। আর এরই মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। বহুদিন ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছেন তিনি। এবারে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের অবসানে নিজের ‘গাজা শান্তি পরিকল্পনা’ যুক্ত করে ট্রাম্প নোবেল জয়ের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করেছেন।

বিজ্ঞাপন

নিজেকে বরাবরই একজন ‘চুক্তিকারী’ ও ‘বৈশ্বিক মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে পরিচিত করা ট্রাম্প মনে করেন, ২০২০ সালের ‘আব্রাহাম চুক্তি’ এবং তার সর্বশেষ ‘গাজা শান্তি রোডম্যাপ’ তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য প্রার্থী করে তুলেছে। তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকাশ্য লবিং ও রাজনৈতিক প্রচারণা বরং তার সম্ভাবনাকে ক্ষীণ করে দিতে পারে।

হোয়াইট হাউসে প্রথম মেয়াদ থেকেই ট্রাম্প প্রকাশ্যে দাবি করে আসছেন, তার পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য নোবেল প্রাপ্য। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক সভায় তিনি বলেন, “সবাই বলে, আমার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত।”

বিজ্ঞাপন

এমনকি ভার্জিনিয়ায় এক সেনা সমাবেশে তিনি অভিযোগ করেন, “আমার মতো কাজ কেউ করেনি, তবু পুরস্কার দেয় এমন কাউকে, যে কিছুই করেনি।”

এই মন্তব্যগুলোর মধ্যেই প্রকাশ পায় তার আত্মবিশ্বাস এবং নোবেল কমিটির প্রতি হতাশা। ট্রাম্পের প্রচারণা এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একধরনের লবিং অভিযানে রূপ নিয়েছে, যেখানে যুক্ত হয়েছে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন, সমর্থনপত্র ও কূটনৈতিক যোগাযোগ।

ট্রাম্পের নোবেল প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছে তার গাজা শান্তি পরিকল্পনা, যার মধ্যে রয়েছে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, জিম্মিদের মুক্তি ও আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গাজা পুনর্গঠন।

বিজ্ঞাপন

যদিও যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব কাগজে সুন্দর শোনালেও বাস্তবায়নে বড় বাধা রয়েছে। পরিকল্পনা ঘোষণার দিনই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন। হামাসও এখনো পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণে রাজি হয়নি, যা চুক্তির অন্যতম শর্ত।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এক মিশ্র প্রচেষ্টা, যার ফলাফল অনিশ্চিত।

বিজ্ঞাপন

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নির্বাচন করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি, যারা প্রতি বছর শত শত প্রার্থী থেকে একজন বা একাধিককে বেছে নেয়। এ বছর মোট ৩৩৮ জন মনোনীত হয়েছেন।

২০২৫ সালের জন্য ট্রাম্পকে মনোনীত করেছেন নিউইয়র্কের রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ক্লাউডিয়া টেনি, যিনি ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তিতে ট্রাম্পের ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়েছেন।

তবে ট্রাম্পের সব মনোনয়ন টেকেনি। এমনকি এক ইউক্রেনীয় সংসদ সদস্য তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন, কারণ ট্রাম্প রুশ হামলার নিন্দা জানাননি।

বিজ্ঞাপন

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ নোবেল কমিটিকে আহ্বান জানিয়েছেন “বাস্তবতা মেনে” ট্রাম্পের কৃতিত্ব স্বীকার করতে। অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। করপোরেট দুনিয়াও এই প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়েছে। ফাইজারের প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বুরলা কোভিড টিকার দ্রুত অনুমোদনে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এমন প্রকাশ্য লবিং নোবেল কমিটির নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে, ফলে ট্রাম্পের সম্ভাবনা আরও কমে যায়।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নোবেল কমিটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়, তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক সাফল্যকে নয়।

অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিনা গ্রেগার বলেন, “ট্রাম্পের প্রচারণা বরং উল্টো ফল দিতে পারে, কারণ কমিটি রাজনৈতিক চাপ এড়াতেই সচেষ্ট থাকে।”

অন্যদিকে বিশ্লেষক থিও জেনু মনে করেন, ট্রাম্পের সংঘাতপূর্ণ ভাষা ও জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকারের মনোভাব নোবেল কমিটির মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিজ্ঞাপন

২০০৯ সালে বারাক ওবামা দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই নোবেল শান্তি পুরস্কার পান, যা তখন ব্যাপক সমালোচিত হয়। পরে কমিটির সাবেক সচিব নিজেই স্বীকার করেন, সিদ্ধান্তটি অনেকটা কূটনৈতিক উৎসাহ দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এখন কমিটি এমন রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত থেকে দূরে থাকতে চায় বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন ইউলিয়া নাভালনায়া, প্রয়াত রুশ বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির স্ত্রী। এছাড়া সুদানের মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোকেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। বেটিং সংস্থাগুলোর তালিকায় ট্রাম্প তৃতীয় স্থানে থাকলেও বাস্তব ফলাফলে সেটি বড় পার্থক্য আনতে পারে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিজ্ঞাপন

নোবেল কমিটি স্বাধীন হলেও নরওয়ে সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অস্বীকার করা কঠিন। গাজা ইস্যুতে নরওয়ের কিছু অর্থনৈতিক পদক্ষেপে দুই দেশের সম্পর্কে ইতোমধ্যেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় ট্রাম্পকে পুরস্কার না দেওয়া নরওয়ের জন্য কূটনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর হতে পারে, যদিও কমিটি চায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে।

নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রথম দেওয়া হয় ১৯০১ সালে। বিজয়ীরা পান স্বর্ণপদক, সনদ এবং প্রায় ১১.৯ লাখ মার্কিন ডলার অর্থমূল্য। ট্রাম্পের জন্য এটি শুধু নোবেল জয় নয়। বরং নিজের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ও ‘বিশ্ব শান্তির মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রশ্নও।

বিশ্বজুড়ে আগ্রহ এখন একটাই। আগামী শুক্রবার নরওয়ের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় জানা যাবে, ট্রাম্পের বহু প্রতীক্ষিত নোবেল স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে কিনা।

বিজ্ঞাপন

সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস, ব্লুমবার্গ, এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD