গাজায় এবার অভ্যন্তরীণ সংঘাত, সাংবাদিকসহ নিহত ২৮

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ফিলিস্তিনের গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গাজা থেকে আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল। কিন্তু সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় দানা বাঁধছে নতুন অভ্যন্তরীণ কোন্দল। প্রভাবশালী দুগমুশ গোত্রের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী এক সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে হামাসের। এতে এখন পর্যন্ত এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিকসহ অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (১১ অক্টোবর) থেকে হামাস ও দুগমুশ গোত্রের মধ্যে শুরু হওয়া এই নজিরবিহীন সংঘর্ষ গাজায় নতুন করে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে। সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারান সাংবাদিক সালেহ আল-জাফরাউয়ি (২৮)। গাজা শহরের সাবরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি।
বিজ্ঞাপন
‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট পরা অবস্থায় সালেহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে নিজেদের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় সাত হাজার সদস্যকে মাঠে নামিয়েছে হামাস। পাশাপাশি সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাঁচজনকে নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
‘গাজাকে আইন অমান্যকারী এবং ইসরায়েলের সহযোগীদের থেকে মুক্ত করার’ লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে হামাসের পক্ষ থেকে।
ইসরায়েলি সেনা সরে যাওয়ার পর গাজার বিভিন্ন এলাকায় বেসামরিক পোশাক এবং গাজা পুলিশের নীল ইউনিফর্মে সশস্ত্র হামাস সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। যদিও হামাসের মিডিয়া অফিস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
বিজ্ঞাপন
এই তৎপরতার মধ্যেই গাজা শহরের সাবরা এলাকায় দুগমুশ গোত্রের বন্দুকধারীদের গুলিতে হামাসের এলিট ফোর্সের দুই সদস্য নিহত হলে ভয়ংকর হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। নিহতদের একজন ছিলেন হামাসের সশস্ত্র শাখার সামরিক গোয়েন্দা প্রধান ইমাদ আকেলের ছেলে।
প্রকাশ্য রাস্তায় তাদের মৃতদেহ ফেলে রাখা হলে হামাসের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ দুগমুশ গোত্রের একটি বিশাল এলাকা ঘিরে ফেলে হামাস যোদ্ধারা। এরপরই উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়।
শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে দুগমুশ গোত্রের ১৯ জন এবং হামাসের ৮ সদস্য নিহত হয়েছেন। হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় তাদের আটজন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: গাজা থেকে আরও ১৩ ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি
সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে উভয় পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। দুগমুশ পরিবারের এক সদস্য স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তারা সাবেক জর্ডান হাসপাতাল ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু হামাস সেখানে তাদের উচ্ছেদ করে ঘাঁটি স্থাপন করতে চেয়েছিল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় নতুন করে এই অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা একজন অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধের সময় হামাসের অস্ত্রাগার থেকে হাজার হাজার অস্ত্র লুট হয়েছে, যা গৃহযুদ্ধের জন্য একটি ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
বিজ্ঞাপন