পাকিস্তানের দেখা মিললো বিরল প্রজাতির ক্যারাকাল বিড়াল

পাকিস্তানের করাচির পশ্চিমে শুষ্ক পাহাড়ের পাথুরে এলাকায় লুকিয়ে থাকা একটি ক্যামেরায় নীরবে ধরা পরে এক বিরল দৃশ্যের। যেখানে দেখা যায় একটি লম্বা, কালো-ঝুঁটিযুক্ত কানওয়ালা বন্য বিড়াল নিঃশব্দে হেঁটে যাচ্ছে। তবে বিড়ালটি কোনো সাধারণ বিড়াল নয়, এটি পাকিস্তানের বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির ক্যারাকাল বিড়াল। এই ক্ষণিকের উপস্থিতিই দুর্লভ প্রমাণ দিচ্ছে যে, পাকিস্তানের অন্যতম রহস্যময় এই বন্য প্রাণীটি এখনও টিকে আছে। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
বিজ্ঞাপন
আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার শুষ্ক অঞ্চলে ক্যারাকাল বিড়ালটি পরিচিত হলেও পাকিস্তানে এটি এখন মারাত্মক বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। এটি লম্বা, কালো ঝুঁটিযুক্ত কান এবং অসাধারণ শিকারের দক্ষতার জন্য বিখ্যাত।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ক্যারাকাল এখন দেশটির মারাত্মক বিপন্ন প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। আবাসস্থল ধ্বংস এবং মানুষের হস্তক্ষেপ এটিকে স্থানীয়ভাবে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ সাঈদ উল ইসলাম জানান, স্থানীয়রা মূলত তাদের ভেড়া, ছাগল বা অন্যান্য ছোট প্রাণীকে রক্ষা করতে বা শিকারের প্রতিশোধ নিতে ক্যারাকালকে হত্যা করে। এছাড়া অবৈধ পোষা প্রাণীর বাণিজ্যও প্রাণীটির জন্য আরেকটি বড় হুমকি।
তিনি বলেন, পাকিস্তানে এই প্রাণীটির সংখ্যা এক হাজারের নিচে, সম্ভবত কয়েকশতে নেমে এসেছে।
সিন্ধুর বন্যপ্রাণী বিভাগের সংরক্ষক জাভেদ মাহার-এর মতে, সরকারি তথ্যের অভাবে সঠিক সংখ্যা জানা কঠিন, তবে একটি অনুমান অনুযায়ী এদের সংখ্যা ১০০ থেকে ২০০ এর মধ্যে।
বিজ্ঞাপন
চার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলে সক্রিয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ গোষ্ঠী ইনডাস ফিশিং ক্যাট প্রজেক্ট (আইএফসিপি)-এর প্রধান জাফির আহমদ শাইখ জানিয়েছেন, পাকিস্তানের যে কয়েকটি অঞ্চলে এখনও মারাত্মক বিপন্ন ক্যারাকাল প্রজাতিটি টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে, তার মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশের চোলিস্তান মরুভূমি, সিন্ধুর কীরথার রেঞ্জ এবং কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ বালুচিস্তানের পার্বত্য এলাকা। মূলত এই দুর্গম এলাকাগুলোতেই প্রাণীটি তার আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়া এবং অবৈধ শিকারের চাপ সামলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
তিনি আরও জানান, জানুয়ারি মাসে দিনের আলোতে একটি ক্যারাকালকে রাস্তা পার হতে দেখার খবরের ভিত্তিতে তারা ক্যামেরা ট্র্যাপ স্থাপন করেন। ক্যারাকালের এটিই বহু বছরের মধ্যে প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপ রেকর্ড। দু’সপ্তাহে প্রায় ৪০০টি ক্লিপ সংগৃহীত হলেও একটিতেই এই বিরল পুরুষ ক্যারাকালটিকে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: গাজায় ঢুকছে ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক
বিজ্ঞাপন
ডব্লিউডব্লিউএফ পাকিস্তান -এর কর্মকর্তা জামশেদ চৌধুরী সহ বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, শিকারী হিসেবে ক্যারাকাল পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইঁদুর ও ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে তারা বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আইনগত সুরক্ষা থাকা সত্ত্বেও ক্যারাকালের সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের অভাব রয়েছে। তাই পরিবেশবিদরা মনে করছেন, এই বিরল প্রাণীটিকে বাঁচাতে হলে আইন প্রয়োগকে কঠোর করার পাশাপাশি এর সংরক্ষণকে মূলধারার বন্যপ্রাণী সুরক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। ক্যারাকালকে রক্ষা করা গেলে তা পুরো বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।