ভারতে ছয় মাওবাদী নিহত, ছত্তিশগড়ে তুমুল সংঘর্ষ

ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের বিজাপুর জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে ছয়জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিজাপুর জেলার মোদকপাল থানা এলাকার কান্দুলনার গ্রাম থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে একটি ঘন বনাঞ্চলে এই সংঘর্ষ হয়।
বিজ্ঞাপন
দশকের পর দশক ধরে চলা সশস্ত্র আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী মাওবাদীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় এই সংঘর্ষ হয়েছে।
ভারতের পুলিশের বরাত ফরাসি বার্তা সংস্থা (এএফপির) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে এতে বলা হয়েছে- মাওবাদী বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে নয়াদিল্লি সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে। একই সঙ্গে আগামী মার্চের মধ্যে এই বিদ্রোহ পুরোপুরি দমনের অঙ্গীকার করেছে।
বিজ্ঞাপন
এর মাঝেই মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ছত্তিশগড় রাজ্যের বিজাপুর জেলায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে মাও বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়েছে। ছত্তিশগড়ের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সুন্দররাজ পাট্টিলিনগম টেলিফোনে এএফপিকে বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর আমরা এখন পর্যন্ত জঙ্গল থেকে ছয় মাওবাদীর মৃতদেহ উদ্ধার করতে পেরেছি।
তিনি আরও জানান, বিজাপুর জেলায় মাওবাদী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ। এ সময় উভয়পক্ষের গুলিবিনিময়ে অন্তত ছয় মাওবাদী নিহত হয়েছেন। অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে আধুনিক অস্ত্রও রয়েছে।
ছত্তিশগড় পুলিশের কর্মকর্তা জানান যে, নিহতদের মধ্যে মাওবাদীদের ‘‘জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররাও’’ রয়েছেন। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনও তথ্য বলেননি তিনি।
বিজ্ঞাপন
কয়েক দশক ধরে চলা সশস্ত্র সংগ্রাম স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে দুই মাস আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মাওবাদী বিদ্রোহীরা। এই প্রস্তাবের মাঝেই মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে মাওবাদী বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে।
এর আগেও জানা যায, গত মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘‘যারা আত্মসমর্পণ করতে চান, তাদের স্বাগত জানানো হবে। আর যারা এখনও অস্ত্র ধরবেন, তারা আমাদের বাহিনীর কাছ থেকে কঠোর জবাব পাবেন।’’
বিজ্ঞাপন
চীনা বিপ্লবী নেতা মাও সেতুংয়ের কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে পড়ে ১৯৬৭ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন ভারতের মাওবাদী বিদ্রোহী বাহিনী। আদিবাসী অধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে লড়াইয়ের দাবি করা মাওবাদীরা নকশাল নামেও পরিচিত ছিল। ওই বছর কয়েকজন গ্রামবাসী জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পর থেকেই সংঘাতের সূচনা গড়ে উঠে। জানা যায় দেশটিতে তখন থেকে চলা মাওবাদীদের বিদ্রোহে এখন পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি বিদ্রোহী, সেনা সদস্য ও সাধারণ নাগরিক নিহত করা হয়েছে।
২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মধ্যে মাওবাদীরা দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছিল। সেই সময় তাদের যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজার জন। তবে গত কয়েক বছরে মাওবাদী বিদ্রোহীদের শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে অনেকটা কমে গেছে।
অক্টোবরে মাসে দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বলেছে, দুই দিনের অভিযানে মাওবাদী বিদ্রোহীদের জ্যেষ্ঠ নেতা মল্লোজুলা ভেনুগোপাল রাওসহ ২৫০ জনেরও বেশি সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন। সূত্র: এএফপি।








