সীমান্তে সংঘাতের মধ্যেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন থাই প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবেশী দেশ কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে সংঘাতের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন থাই্যান্ডের রাজা মাহা ভাজিরালঙকর্ন।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) এক রাজকীয় ডিক্রি জারির মাধ্যমে পার্লামেন্ট বিলোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
থাইল্যান্ডের সংবিধানে পার্লামেন্ট বিলোপের ৪৫ থেকৈ ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে।
প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুলের পরামর্শেই এ পদক্ষেপ নিয়েছেন রাজা মাহা ভাজিরালঙকর্ন। ডিক্রিতে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিন মাস আগে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতসহ এমন সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী তাকে এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারকে হতে হচ্ছে, যেগুলো আসলে নির্বাচিত সরকারের মোকাবিলা করা উচিত। এ কারণেই রাজাকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, গত মাসে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১৭৬ জন নিহত হয়েছেন। এই নিয়ে দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন আনুতনি চার্নভিরাকুল। এমনকি পার্লামেন্ট তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের ব্যাপারেও আলাপ-আলোচনা চলছিল।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, অনাস্থা ভোটের আলোচনা ধামাচাপা দিতেই রাজাকে পার্লামেন্ট বিলোপের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তবে এমন এক সময়ে এই ডিক্রি জারি করা হয়েছে, যখন সীমান্তে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘাত চলছে থাই সেনাবাহিনীর। গত প্রায় চার দিন ধরে চলমান এ সংঘাতে ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন উভয় দেশের অন্তত ২০ জন এবং নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়িঘর ছেড়ে ছুটতে বাধ্য হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
রাজকীয় ডিক্রিতে এ ব্যাপারেও বলেছেন আনুতিন। তিনি বলেছেন, “অতি সম্প্রতি দেশে জরুরি অবস্থা দেখা দিয়েছে এবং এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি প্রশাসন দ্রুত এবং তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিয়েছেৃকিন্তু আপনি যখন একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার সরকার পরিচালনা করবেন, তখন সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় স্থিতিশীলতা।”
“জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন সংকটময় হয়ে ওঠে—সে সময় নিরবিচ্ছিন্ন, কার্যকর এবং স্থিতিশীলতার সঙ্গে জনপ্রশাসন পরিচালনা করা একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে অসম্ভব”, ডিক্রিতে বলেছেন আনুতিন।
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, নৈতিকতা লঙ্ঘনের দায়ে গত ২৯ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, যিনি থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ৩৯ বছর বয়সী পায়তংতার্ন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে এবং দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল পিউ থাই পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা।
পায়েতংতার্ন পদত্যাগ করার পর পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হন ভূমজাইথাই পার্টির শীর্ষ নেতা আনুতিন।
বিজ্ঞাপন
পার্লামেন্টে ভোটের সময় আনুতিনকে সমর্থন দিয়েছিল থাইল্যান্ডের অন্যতম বৃহৎ এবং পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল পিপলস পার্টি। আনুতিন সে সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে সামরিক বাহিনীর লেখা সংবিধানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে আগামী ৪ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে তার সরকার।
তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আনুতিন চার্নভিরাকুলের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে পিপলস পার্টির। থাইল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে, আজ শুক্রবার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পিপলস পার্টি।
পিপলস পার্টির এই পদক্ষেপের একদিন আগে আনুতিনের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন রাজা মাহা ভাজিরালঙকর্ন। সূত্র: বিবিসি।








