মিয়ানমারে ‘সাজানো’ নির্বাচনে তরুণদের অনীহা, ভোটকেন্দ্রে বয়স্কদের ভিড়

মিয়ানমারে রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) শুরু হওয়া জান্তা সরকারের আয়োজিত জাতীয় নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো কম। অতীতের নির্বাচনে যেখানে তরুণদের দীর্ঘ লাইন দেখা যেত, এবার সেই দৃশ্য অনেকটাই অনুপস্থিত। বরং ভোটকেন্দ্রগুলোতে বয়স্ক নাগরিকদের উপস্থিতিই বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
বিজ্ঞাপন
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশজুড়ে সংঘাত, অর্থনৈতিক সংকট ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিপুলসংখ্যক তরুণ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। বিশেষ করে বাধ্যতামূলক সামরিক নিয়োগ এড়াতে এবং জীবিকার সন্ধানে বিদেশমুখী হয়েছেন অনেকে।
যারা দেশে রয়ে গেছেন, তাদের মধ্যেও এই নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ খুব সীমিত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও গণতন্ত্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো এই নির্বাচনকে আগেই ‘সাজানো’ ও অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছে, যা তরুণদের অনীহার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিজ্ঞাপন
নিরাপত্তার কারণে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে মান্দালয়ের এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, “ভোট দিতে যারা আসছেন, তাদের বেশির ভাগই বয়সে প্রবীণ। তরুণদের খুব কমই দেখা যাচ্ছে।”
তার মতে, “মানুষ এই নির্বাচনে আস্থা পাচ্ছে না। কেউই নতুন কোনো ঝামেলায় জড়াতে চায় না।”
ইয়াঙ্গুনের সুলে প্যাগোডার কাছের একটি ভোটকেন্দ্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে শিশু কোলে নেওয়া নারী, গৃহিণী ও প্রবীণদের লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেলেও তরুণদের উপস্থিতি ছিল সীমিত। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ওই কেন্দ্রে নিবন্ধিত ভোটার প্রায় ১ হাজার ৪০০ হলেও ভোটগ্রহণ শেষের দিকে মাত্র ৫০০ জন ভোট দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২০ সালের নির্বাচনে মিয়ানমারে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। তবে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সেইন ই (৭৪) বলেন, ভোট দেওয়া নাগরিক দায়িত্ব হলেও তিনি পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না। তার ভাষায়, “এটি মূলত ক্ষমতা ধরে রাখার একটি কৌশল—সেনা পোশাক বদলে বেসামরিক রূপ নেওয়া মাত্র।”
জান্তা সরকার এই নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে তুলে ধরলেও বাস্তবে নিরাপত্তা শঙ্কা ও ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করছে। ইয়াঙ্গুনের অনেক ভোটারই কাকে ভোট দিয়েছেন বা কেন ভোট দিয়েছেন—তা প্রকাশ করতে চাননি।
বিজ্ঞাপন
অভ্যুত্থানবিরোধী গোষ্ঠীগুলো আগেই নির্বাচনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। স্যাগাইং অঞ্চলের পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের এক কর্মকর্তা জানান, কিছু এলাকায় মানুষকে জোরপূর্বক ভোটকেন্দ্রে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ভোটের দিন ইয়াঙ্গুনের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ছিল অস্বাভাবিক নীরব। মাঝে মাঝে কেবল সশস্ত্র পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ির চলাচল এবং ভোট দিতে উৎসাহমূলক প্রচারগানের শব্দ শোনা গেছে।








