Logo

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাড়ছে দমন-পীড়ন: এইচআরডব্লিউ

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
৯ অক্টোবর, ২০২৫, ২০:০৬
12Shares
বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাড়ছে দমন-পীড়ন: এইচআরডব্লিউ
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার করে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

বিজ্ঞাপন

সংস্থাটি বলেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যক্তিদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ অভিযোগ করে, শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ ও জমায়েতের অধিকারকে সীমিত করা হচ্ছে, এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে।

সংস্থাটি জাতিসংঘের মানবাধিকার দলকে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়, যাতে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি ও মানবাধিকার নিশ্চিতে সরকারকে উৎসাহিত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে সহিংসতায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে, তাদের সভা-সমাবেশ ও অনলাইন বক্তব্যেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে পুরে দেওয়া বা শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথে হাঁটে, তবে শেখ হাসিনার শাসনের সঙ্গে পার্থক্য কোথায়?”

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও যোগ করেন, “সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে দেশে মানবাধিকার রক্ষায় সহযোগিতার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এখন তাদের উচিত এই পরিস্থিতির ওপর সরাসরি নজরদারি করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার ঠেকাতে হস্তক্ষেপ করা।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজার হাজার মানুষকে ‘শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে’ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে চিকিৎসা বঞ্চনা ও পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন, যা পূর্ববর্তী সরকারের দমননীতির পুনরাবৃত্তি মনে করিয়ে দেয়।

বিজ্ঞাপন

গত ২৮ আগস্ট ঢাকায় ‘মঞ্চ ৭১’ আয়োজিত এক সভা থেকে সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সাবেক রাজনীতিকসহ ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। পরবর্তীতে তাদের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশের দাবি, তারা সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছিলেন; তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা তা অস্বীকার করেছেন। এমনকি আদালতে হাজিরার সময় সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে হেলমেট ও হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়, যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়।

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালে প্রণীত সন্ত্রাসবিরোধী আইন অতীতে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিরোধী মত দমনে ব্যবহৃত হয়েছিল, এখন সেই একই আইন নতুন সরকারের হাতেও রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ এডিটরস কাউন্সিলও সতর্ক করেছে, আইনের এই সংশোধন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলায় ১৫২ জন নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিশোধ ও সামাজিক সহিংসতার এই চক্র বন্ধ না হলে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় সম্প্রতি বাংলাদেশে তিন বছরের জন্য একটি মিশন চালুর ঘোষণা দিয়েছে, যার লক্ষ্য মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সরকারকে সহযোগিতা করা।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি শেষ পর্যন্ত বলেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচনের আগে সরকারের উচিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করে মুক্ত, নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।”

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD