ভুয়া জুলাই যোদ্ধাদের শনাক্ত করেছে সরকার, বাতিল হবে গেজেট

জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করেও জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ১০৪ জনকে ‘ভুয়া’ হিসেবে শনাক্ত করেছে সরকার।
বিজ্ঞাপন
যাচাই-বাছাই শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব ব্যক্তির নামের গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নাম পুনরাবৃত্তি পাওয়া আরও ২৩ জনসহ মোট ১২৭ জনের গেজেট বাতিল হবে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভুয়া জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া এবং ১ জনের নামে দ্বৈত গেজেট রয়েছে। সিলেটে ২৬ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দ্বৈত গেজেট। চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৪ জন ভুয়া এবং ৪ জনের দ্বৈত গেজেট পাওয়া গেছে। খুলনায় ৫ জন ভুয়া ও ৪ জনের নামে গেজেট দুবার প্রকাশ হয়েছে। রংপুরে ২ জন ভুয়া জুলাই যোদ্ধা শনাক্ত হয়েছেন। ঢাকা বিভাগে ৭ জন ভুয়া ও আরও ৭ জনের নামে দ্বৈত গেজেট। রাজশাহীতে ৯ জন ভুয়া ও ৪ জনের নামে পুনরায় গেজেট হয়েছে। বরিশালে ২ জনের নামে দ্বৈত গেজেট শনাক্ত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন নেত্রকোনার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম (গেজেট নম্বর ৮০), মোহাম্মদ নুরুল আমিন (৮৮), তানভীর আহমেদ (১২১), আছিয়া খাতুন (১২৩), রুহুল আমিন (১২৭), মো. আমি হাসান রুপম (১২৯), মোহাম্মদ আকিব তালুকদার (১৪৬), মো. সুজন মিয়া (১৫৫), মো. ইমন শাহারিয়া (১৬৫), আশরাফুল ইসলাম জাসাম (১৭২), মুশফিকুর রহমান (১৯৭), মো. সজিব (১৯৮), সোহাগ মিয়া (১৯৯), রুবেল মিয়া (৩৬২), মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (৩৬৩), রাব্বি হাসান শ্রীনি (৫৬৫), মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক (৫৬৬), মো. আবু ফরিদ আহামেদ (৫৬৭), আফরিনা জান্নাত (৫৭০) ও মাজহারুল ইসলাম (৬৪৮)।
ঢাকা বিভাগের ৭ জন ভুয়া ও ৭ জন দ্বৈত গেজেটধারী হলেন: রাসেল (৬৭০), খন্দকার রাজ (১০৬৩), রাফিউল নাঈম (১১৬১), রাশেদুল ইসলাম অনিক (১১৬৩), আব্দুল্লাহ আল রাহাত (১১৬৬), মো. মঞ্জমুল আলম জিসান (১৯৩২), মো. সাইফুল ইসলাম শুভ (২৬৮২), রিয়াজুল হাসান (২৮৩৮), বেলায়াত হোসেন শাহীন (২৮৩৯), মুজবর মৃধা (৩৯৬৪), জিহাদ (৩৪১৩), মো. রফিকুল সরদার (৭৩৩), মো. মাসুদুর রহমান (৬৪৫), মোছা. রুমি (৩৪৩১) ও মো. রিয়াজ শরীফ (১৩৮২)।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার মো. শাগর (৩২৮), আবদুল্লাহ আল নোমান (৪৬৯), নাইম উদ্দীন শাঈদ (৪৯২), মোহা. শরিফুল ইসলাম (৫১৫), শাহাদাত ইকবাজ তাহনি (৫২১), তাহমিনা ইকরার তারকি (৫২২), মাহাবী তাজওয়ার (৫৩৪), জসিম উদ্দিন (৫৪২), মো. আতিকুল ইসলাম (৫৫২), মো. ইয়াছিন (৫৬০), আরফাতুল ইসলাম (৫৯৫), ফরহাদ আলম (৬০১), মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান (৬০৩), মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর (৬১৬), পঠন চন্দ্র নাথ (৬২২), মিশকাত-আলম রিয়াদ (৬৭৫), মো. এমরান (৭৯৭), মাহাম্মদ সাগর (৭৬৮), নুরুল্লাহ (৭৮৯), সোহাম্মদ রাফি (৭৯৯), ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস (৮০২), মোছা. ইছনিয়া আকতার (৮২৪), মো. মাঈনুদ্দীন (৮২৫), সাইমন (৯৭৩), মো. আরিফ (১৯৭৬), রাসেল (১৯৮৬), রমজান আলী (৯৮৭), মাহিম চৌধুরী (৯৯৯), রিফাত বিন আল (১৯৯৯)।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ না নিয়েও অনেকেই জুলাই যোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শেষে ভুয়া প্রমাণিতদের তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার।
বিজ্ঞাপন
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক) পূর্বে জানিয়েছিলেন, যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জুলাই যোদ্ধার মর্যাদা নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি তথ্যমতে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘ক’ শ্রেণিতে (অতি গুরুতর আহত) ৬০২ জন, ‘খ’ শ্রেণিতে (গুরুতর আহত) ১,১১৮ জন এবং ‘গ’ শ্রেণিতে (আহত) ১২,০৮০ জনসহ মোট ১৪,৬৩৬ জনের নাম গেজেটভুক্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া নিহত হন ৮৪৪ জন, যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, যাদের নামে অভিযোগ উঠেছিল, তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা হয়েছে। প্রমাণ পাওয়ার পর গেজেট বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গেজেট বাতিলের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
সরকারের এ পদক্ষেপে প্রকৃত জুলাই যোদ্ধারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এতে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই আন্দোলনের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে।








