সরকার জনমত ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাই আন্দোলনে নেমেছি: সেক্রেটারি জেনারেল

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সরকার জনমতের তোয়াক্কা না করে বিশেষ রাজনৈতিক শক্তির চাপে মাথা নত করছে। এ কারণেই জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সমাবেশটি আয়োজন করা হয় জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন ও পিআর পদ্ধতির প্রবর্তনসহ ৫ দফা দাবিতে।
এ সময় মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অনেকে বলছেন সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে, তাহলে রাজপথে কেন? আমরা স্পষ্ট করে বলছি একদিকে জুলাই সনদ করবেন, অন্যদিকে গোপনে বিএনপির সঙ্গে কথা বলবেন এটা হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের নিরপেক্ষভাবে ডাকুন, ৫ দফা দাবি মেনে নিন, তাহলে আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসবো।
গণভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনে যেসব বিষয়ে সবার মত হয়েছিল, তা ‘জুলাই সনদে’ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এজন্য সরকারকে সংবিধান অনুযায়ী নির্দেশনা জারি করতে হবে এবং গণভোটের আয়োজন করতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয় আদালতে নেওয়া যাবে না। এতে শুধু জটিলতা বাড়বে। শেখ হাসিনা অতীতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা আর চলবে না।
বিজ্ঞাপন
গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই না। কিন্তু জামায়াতের আমিরই বলেছেন, ফেব্রুয়ারিই নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আমরা সময়মতো নির্বাচন চাই, তবে সেটি সংস্কার, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণহত্যার বিচার, সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং ফ্যাসিবাদী রাজনীতির অবসানের মাধ্যমে হতে হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র বিএনপিকে দেখানো হলেও আমাদের দেখানো হয়নি। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচিত সরকার এসে এটি বাস্তবায়ন করবে। তাই বিএনপি এতে খুশি। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা এতদিন সংস্কারের পেছনে সময় দিলাম কেন? এর দরকারই বা কী ছিল?
বিজ্ঞাপন
পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, দেশের ৩১টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআর পদ্ধতিতে একমত। কিন্তু বিএনপি এতে আপত্তি করছে। কারণ এই পদ্ধতিতে কালো টাকা, পেশিশক্তি বা কারচুপি চলে না। মনোনয়ন বাণিজ্য হয় না। তাই যারা এসব সুবিধা নেয়, তারা পিআর পদ্ধতি চায় না।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে না হলে জনগণের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত হবে না। ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের অবসান এবং সংসদে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে এই পদ্ধতি জরুরি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের সব জুলুম, গুম, খুন, গণহত্যা, লুটপাট ও দুর্নীতির বিচার জনগণ দেখতে চায়। সেই সঙ্গে স্বৈরাচারী শক্তির দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। এই দাবি এখন জনগণের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, দলের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, রংপুর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, মহানগর সেক্রেটারি কেএম আনোয়ারুল হক কাজল, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী, সহকারী সেক্রেটারি আল-আমিন হাসান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মোস্তাক আহমেদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের রংপুর মহানগর সভাপতি নুরুল হুদা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুমন সরকার ও জেলা সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশ শেষে জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে শুরু হয়ে নগরীর প্রধান সড়ক ঘুরে শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।