জামায়াতের সঙ্গে জোট না করা নিয়ে যা জানাল ইসলামি দলগুলো

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জোট রাজনীতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে প্রকাশ্যে আপত্তি তুলেছে এবং তাদের সঙ্গে ঐক্যের বিরোধিতা করছে।
বিজ্ঞাপন
ইসলামি দলগুলোর নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় আপত্তি না থাকলেও জামায়াতের আদর্শিক অবস্থান ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা নিয়ে তাদের গভীর দ্বিধা রয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী সম্প্রতি হাটহাজারীতে এক সম্মেলনে বলেন, “মওদুদি ফিতনা প্রতিহত না করলে দেশে ইসলাম টিকবে না। জামায়াত সাহাবিদের সত্যের মানদণ্ড মনে করে না, ইসলামের অনেক মূলনীতিকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে।”
বিজ্ঞাপন
তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াতের আদর্শ ইসলামি শিক্ষা ও আখলাকের পরিপন্থী এবং তাদের সঙ্গে ঐক্য মানেই দ্বীনের ক্ষতি।
এমনই অবস্থান নিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, “বিএনপি ইসলামি দল নয়, তাই তাদের সঙ্গে জোটে আদর্শগত বিভ্রান্তি হয় না। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মতপার্থক্য থাকায় তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আমাদের কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।”
একই সুরে কথা বলেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। তিনি বলেন, “আমরা এমন কোনো দলের সঙ্গে জোট করতে চাই না, যার আদর্শে ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও দর্শনের ক্ষতি হয়। বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে আলাদা, কিন্তু জামায়াত ধর্মীয় ব্যাখ্যায় আলেম সমাজ থেকে ভিন্ন অবস্থানে।”
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পির মাওলানা মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, তাদের সংগঠন আধ্যাত্মিকতা ও রাজনীতিকে একত্রে দেখে এবং জামায়াতের চিন্তাধারা তাদের পথ থেকে ভিন্ন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ৫ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকার কারণে দুই দলের সম্পর্ক কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী এই অবস্থানকে ভিন্নভাবে দেখছে। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “ইসলামি দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা একাধিকবার একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এবারও নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আমাদের মূল লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা।”
বিজ্ঞাপন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসলামি দলগুলোর এই বিভক্ত অবস্থান নির্বাচনী সমীকরণে বড় ভূমিকা রাখবে। একদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সম্ভাব্য জোটে ইসলামি দলের উপস্থিতি ভোট সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে জামায়াত ইস্যু ইসলামপন্থী রাজনীতিতে নতুন হিসাব তৈরি করছে।
বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ইসলামি রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১০টি, এছাড়া আরও কয়েকটি অনিবন্ধিত সংগঠন সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছে। অতীতে একাধিকবার ঐক্যের চেষ্টা হলেও মতাদর্শগত ভিন্নতা, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তা সফল হয়নি। এবারও জামায়াতকে ঘিরে সেই পুরনো জটিলতা আবার সামনে এসেছে।