এনসিপি থেকে চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী মীর আরশাদুল হক। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক ঘোষণায় তিনি এ পদত্যাগের কথা জানান।
বিজ্ঞাপন
একই ঘোষণায় তিনি এনসিপির সব পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তের কথাও জানান। এছাড়া ওই পোস্টে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে স্বাগত জানান তিনি।
ফেসবুক পোস্টে মীর আরশাদুল হক বলেন, আমি মীর আরশাদুল হক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব, নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য, মিডিয়া সেল ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, পরিবেশ সেলের প্রধান এবং চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারীসহ অন্যান্য সব দায়িত্ব ও পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমি এই মুহূর্তে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলাম। চট্টগ্রাম-১৬ সংসদীয় আসনে (বাঁশখালী) এনসিপির হয়ে আমি নির্বাচন করছি না।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আজ একটি বিশেষ দিনে এই ঘোষণা দিচ্ছি যেদিন দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে স্বাগত জানাই।
পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে মীর আরশাদুল হক বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু দলের প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১০ মাসের অভিজ্ঞতায় তার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, দল ও দলের নেতারা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে তিনি এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার ভাষায়, দল ও দলের বড় অংশের নেতারা ভুল পথে আছেন এবং সে পথে তিনি চলতে পারেন না। এ মুহূর্ত থেকে এনসিপির সঙ্গে তার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই, তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকবে এবং দলের প্রতি শুভকামনা রইল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন ও পলায়নের দিনে তিনি গভীরভাবে অভিভূত হয়েছিলেন এবং ভেবেছিলেন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, যেখানে মানুষের ন্যূনতম অধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের ১৪০০-এর বেশি শহীদ, হাজার হাজার আহত এবং এত আত্মত্যাগের পরও শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্য বাংলাদেশ গড়ে ওঠেনি বলে তিনি মনে করেন। এ ক্ষেত্রে এনসিপিও ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মীর আরশাদুল হক বলেন, দেশে অস্থিরতা তৈরি করা, পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তার মতে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা।
তিনি বলেন, আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিকভাবে সচেতন, উন্নত ও প্রগ্রেসিভ চিন্তার নতুন তরুণ নেতা, নতুন উদ্যোগ এবং বাংলাদেশপন্থি দলগুলোকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই তিনি সচেতনভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বহুবার হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রথম অগ্রাধিকার সবসময় দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ ছিল বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: বিমানবন্দর ত্যাগ করলেন তারেক রহমান
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন মীর আরশাদুল হক। জুলাই অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে তার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হলো—এই মুহূর্তে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা ও সক্ষমতা তারেক রহমানের রয়েছে।
তারেক রহমানের ভিশনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, যখন অন্যান্য দল ধর্ম ও পপুলিজমকে প্রধান এজেন্ডা করে নির্বাচনে এগোতে চাচ্ছে, তখন তারেক রহমান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে একটি স্পষ্ট ভিশন জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন। আগামী দিনে জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, সংস্কৃতি ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত সমাধানের কথাও তিনি বলছেন, যা তাকে আকৃষ্ট করেছে।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম মহানগরের এই প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, তরুণদের উচিত হবে কোনো হুজুগ বা পপুলিজমে প্রভাবিত না হয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থ, ভবিষ্যৎ ও কল্যাণ বিবেচনা করে তারেক রহমানের জনকল্যাণমূলক ভিশন বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও সমর্থন জানানো। ব্যক্তিগতভাবে তিনি তার পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রাখেন।







