Logo

প্রকৌশলী মতিনের পকেটে লুটের টাকা

profile picture
বশির হোসেন খান
১১ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩:৪৯
30Shares
প্রকৌশলী মতিনের পকেটে লুটের টাকা
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

সরকারি প্রকল্পে বাস্তবতা আর কাগজে-কলমের মধ্যে বিশাল গড়মিল এ যেন বাংলাদেশের দুর্নীতির চিরাচরিত রূপ। বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার ও জলযান সংগ্রহ প্রকল্পে তদন্ত করে দেখা গেছে, মাঠে নেই যন্ত্রপাতি, কাজের চিহ্ন নেই, কিন্তু বিল উত্তোলন হয়েছে শতভাগ! দুর্নীতির এমন উৎসব এক দিনে হয়নি, বরং এটি হয়েছে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার সম্মিলিত ফল।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ড্রেজিংয়ের নামে যেসব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ দেখানো হয়েছে, তার বেশিরভাগই কখনো মাঠে পৌঁছায়নি। ড্রেজার, পাম্প, স্পেয়ার পার্টসের নামে কোটি কোটি টাকা কমিশন পেয়েছেন, অথচ প্রকল্প এলাকায় তার নেই কোনো অস্তিত্ব। একজন পরিদর্শক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, “যন্ত্রপাতির তালিকা আছে, বিল আছে, কিন্তু যন্ত্রটা কোথায় তা কেউ বলতে পারে না।”

প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের জন্য দেখানো হয়েছে, এলসি খোলা হয়েছে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আনার জন্য। কিন্তু দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, এসব এলসির কোনো বৈধ রেকর্ড নেই, আমদানির কাগজ জাল, এবং অনেক ক্ষেত্রে আমদানিই হয়নি। কিন্তু অর্থ ছাড় হয়েছে পুরোপুরি, যেন ‘সাপ্লাই’ শুধু কাগজেই যথেষ্ট।

তদন্তে উঠে এসেছে, কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এমন সব কাজের বিল তোলা হয়েছে, যা বাস্তবে কখনো শুরুই হয়নি। অথচ, ভবিষ্যতে ড্রেজিংয়ের জন্য অনুমোদিত প্রস্তাবের অগ্রিম বিল তুলে নেওয়া হয়েছে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই কাজ একাধিকবার দেখিয়ে বিল উত্তোলন হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এতসব অনিয়মের মূলে যে সিন্ডিকেট, তাদের কাজের ধরন এক রকম, একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা আলাদা দেখানো হলেও, নিয়ন্ত্রণ ছিল এককভাবে প্রকৌশলী আব্দুল মতিনের হাতেই। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, ঠিকাদারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই তা সরাসরি মতিনের বা তার পরিবারের নিয়ন্ত্রিত অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করা হয়েছে।

একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শতভাগ বিল দেওয়া হয়েছে, অথচ গড় কাজের অগ্রগতি ছিল ৪০ ভাগের নিচে। সাইট ভিজিটে দেখা গেছে ৬০ভাগ যন্ত্রপাতিই মাঠে অনুপস্থিত। একই স্পেয়ার পার্টস ৩ বার দেখিয়ে কেনা হয়েছে, এবং প্রতিবার দামও আলাদা আলাদা দেখানো হয়েছে! প্রশ্ন উঠছে, এত বড় মাপের দুর্নীতি এতদিন ধরে কীভাবে চলল? প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কি অন্ধ ছিলেন? নাকি তারা এই চক্রের নীরব অংশীদার?

দুদক সূত্র বলছে, ৬১টি দরপত্রের মধ্যে ৩৪টির তদন্তেই প্রায় ২০০ কোটির বেশি অর্থ লোপাটের প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু যদি পুরো প্রকল্প খতিয়ে দেখা হয়, এই অঙ্ক হয়তো ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

মোংলা-মাছিয়াখালী এবং যশোরের ভৈরব ও খুলনার আন্টিহারা নৌপথ ড্রেজিং প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন কেবল দুর্নীতির এক মুখ নয়, তিনি একটি দুর্নীতিবাজ সিস্টেমের প্রতিচ্ছবি। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে, এই সিন্ডিকেট ভাঙা ছাড়া প্রকল্প উন্নয়ন নয়, কেবল লুটপাটই চলবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর সাবেক এক প্রকৌশলী বলেন, “সরকারি প্রকল্পে যন্ত্রপাতির বদলে যদি ফাঁকা মাঠ থাকে, বুঝতে হবে দুর্নীতির দানব কত বড় হয়েছে।”

এ ব্যাপারে খুলনার আন্টিহারা নৌপথ ড্রেজিং প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিনের মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। বরং তিনি বিভিন্ন লোক দিয়ে নানা ভাবে প্রভাব দেখিয়ে সংবাদ বন্ধ করতে রীতিমতো চাপ প্রয়োগ করছেন।

জেবি/আরএক্স
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD