জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে ওএমএস হরিলুট

দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষদের জন্য স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহের সরকারি প্রকল্প ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) আজ নিজেই এক ভয়ঙ্কর দুর্নীতির জালে বন্দি।
বিজ্ঞাপন
২০২৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ওএমএস ডিলার নিয়োগের উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে বৈধভাবে নির্বাচিত ২৪৩ জন আবেদনকারী এখন চরম হতাশা ও ক্ষোভের মধ্যে রয়েছেন। কারণ, এক মাস পেরিয়ে গেলেও ফলাফল গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। আর এই বিলম্বের নেপথ্যে উঠে এসেছে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ, যার নেতৃত্বে ঢাকা রেশনিংয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক মো: জাহাঙ্গীর আলম।
ভুক্তভোগী ও অনুসন্ধানী সূত্র বলছে, ওএমএস ডিলার নিয়োগ এখন গোপন নিলামের মতো। প্রতি নিয়োগ প্রাপ্ত ডিলার থেকে দাবি করা হচ্ছে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ, আর যারা টাকা দিতে অপারগ, তাদের নাম গেজেটে আটকে রাখা হচ্ছে। এমনকি অভিযোগ রয়েছে,“লটারি ছিল লোক দেখানো। পেছনে ছিল আগে থেকেই সাজানো স্ক্রিপ্ট যেখানে টাকা দিলে নিয়োগ, না হলে বাতিল।”
ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি এবং অনিয়ম অভিযোগ রয়েছে। প্রতি নিয়োগে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করছে জাহাঙ্গীর আলম সিন্ডিকেট। পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ ডিলারদের পুনরায় নিয়োগ দিয়ে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ভঙ্গ করা করা হচ্ছে। সরকারি খাদ্য পণ্য সঠিক গুদামে না পৌঁছে অনিয়মে বিক্রি অভিযোগ রয়েছে। এই দুর্নীতির নেপথ্যে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কাজ করছেন এরিয়া রেশনিং অফিসার তৌফিক এলাহী, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী লীনা আহমেদ এবং কিছু ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতারা।
বিজ্ঞাপন
সূত্র বলছে, এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা ঢাকা রেশনিং (সিসিডিআর) প্রধান নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর আলম সরাসরি ঘুষ লেনদেনে করেন। এরিয়া রেশনিং অফিসার তৌফিক এলাহী যাচাই-বাছাইয়ে অনিয়ম ও আবেদন বাতিল প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশিবাদপুষ্ট স্বৈরাচারের দোসর সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী লীনা আহমেদ এই সিন্ডিকেটের সক্রিয় অন্যতম সদস্য। এ ছাড়া খাদ্য অধিদপ্তরের দালাল হিসেবে খ্যাত শামীম আহমেদ সরাসরি রেশনিং এর জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গে ডিলার নিয়োগ চুক্তি করে লেনদেন করেন।
এ বিষয় মো: জাহাঙ্গীর আলমকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অপরদিকে, বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ অভিযোগ পাওয়ার পর একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তবে, ওএমএস কর্মসূচির এমন বিতর্ক ও দুর্নীতির খবর দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার উপর গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। এখন সকলের নজর থাকবে এই তদন্ত কীভাবে সুষ্ঠু ও দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, এটি কোনো স্বচ্ছ লটারি ছিল না, বরং পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রভাবশালী মহলের ইচ্ছামতো নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য লোক দেখানো একটি প্রহসন। তারা গেজেট প্রকাশের দাবি জানান।
বিজ্ঞাপন
এ ব্যাপারে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সফল হতে দুর্নীতি প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।”