Logo

শ্রীপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর চর দখল করে স্থাপনা, হারিয়ে যাচ্ছে অস্তিত্ব

profile picture
উপজেলা প্রতিনিধি
গাজীপুর
২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩:২২
20Shares
শ্রীপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর চর দখল করে স্থাপনা, হারিয়ে যাচ্ছে অস্তিত্ব
ছবি: প্রতিনিধি

গাজীপুরের শ্রীপুরে গোসিংগা ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী শীতলক্ষ্যা নদীর চর দখল করে স্থাপনা নির্মাণে হারিয়ে ফেলছে নিজের অস্তিত্ব।

বিজ্ঞাপন

শত শত বছর ধরে এই নদী দিয়েছে জীবন, দিয়েছে প্রশান্তি, দিয়েছে কৃষি, মৎস্য ও যাতায়াতের অবলম্বন। কিন্তু আজ সেই নদীই পরিণত হয়েছে দখল, বর্জ্য আর অব্যবস্থাপনার এক ভয়াবহ প্রতীকে।

গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের পাশ ঘেঁষে নদীর মাঝ বরাবর যে বিশাল চরটি গড়ে উঠেছে, তা এখন পুরো এলাকার জন্য এক দুঃস্বপ্ন। এক সময় ঢেউয়ের ছন্দে যেখানে ছুটে চলত নৌকাভর্তি মানুষ, এখন সেখানে জায়গা নিয়েছে বাঁশের ব্যবসা, পণ্যবাহী ট্রলারের লোড-আনলোড কেন্দ্র আর অবৈধ দোকানঘর।

বিজ্ঞাপন

চর পড়ে যাওয়ায় নদীর গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, জলপ্রবাহের স্বাভাবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে, মানুষের চলাচলের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ছে। অথচ বছরের পর বছর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন—দখলদারদের উৎসাহ বাড়ছে সেই নীরবতার সুযোগে।

স্থানীয়রা জানান, দিনের আলোয় খোলামেলাভাবে বাঁশের ব্যবসা ও অবৈধ লোড-আনলোড চলছে। নদীর বুক কেটে ব্যবসার জমি বানানো হচ্ছে বছরের পর বছর, কিন্তু কারও মুখে প্রশ্ন নেই। নদী যেন পরিণত হয়েছে ‘সুশৃঙ্খল অব্যবস্থার এক মঞ্চে।’

প্রতি বছর ঈদের সময় এই চরেই অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ। কয়েক বছর আগে স্থানীয় ঈদগাহ কমিটি মাঠের পশ্চিম পাশে একটি দেওয়াল নির্মাণ করে, উদ্দেশ্য ছিল জায়গাটি পরিস্কার ও সুন্দর রাখা। কিন্তু সম্প্রতি কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অভিযোগ তুলে এই দেওয়াল অপসারণের দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দেয়ালের একটি অংশ ভেঙে দেয়। অথচ নদীর বুকজুড়ে থাকা বাঁশের গুদাম, দোকানঘর কিংবা দখলকৃত ব্যবসা কেন্দ্রগুলোর দিকে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। স্থানীয়দের প্রশ্ন—‘একটি ঈদগাহের দেয়ালই কি প্রশাসনের চোখে একমাত্র অপরাধ?’

গোসিংগার সচেতন নাগরিকরা এখন এক কণ্ঠে বলছেন—‘চর খনন কর, নদী বাঁচাও।’ তাদের দাবি, দ্রুত নদী খনন করে শীতলক্ষ্যার প্রাকৃতিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার করতে হবে, নদীর জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

নদী শুধু পানি নয়—এটি এই অঞ্চলের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও বিশ্বাসের ধারক। শীতলক্ষ্যা যদি মারা যায়, তাহলে গোটা অঞ্চলের জীবনও থমকে যাবে। তাই এখন সময় এসেছে নদী রক্ষায় সবাইকে একসঙ্গে দাঁড়ানোর।

সচেতন মহলের আহ্বান, চর খনন হোক ও নদী বাঁচুক—শীতলক্ষ্যা ফিরে পাক তার আগের রূপ, তার স্রোত ও তার সৌন্দর্য।

নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘নদীর চরে কোনো অবস্থাতেই স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। চর রক্ষায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় শুধু সবুজায়ন করতে পারবে। নদীর শ্রেণিভুক্ত জমিতে স্থাপনা নির্মাণ কোনোভাবেই আইন সমর্থন করে না। এটা দখলের কৌশল।’

বিজ্ঞাপন

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, ‘নদীর চর দখল করে স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। চরে ঈদগাহ মাঠ নির্মাণের অনুমতি নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জেবি/এসএ
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD