ওএসডি মোতাকাব্বিরের বিলাসী জীবন

দুর্নীতি, প্রভাব খাটানো ও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে আলোচিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোতাকাব্বির আহমেদকে পদ থেকে সরিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে গত ২২ অক্টোবর তাঁকে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর প্রশাসক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সরকারি নথিপত্র ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, আটাব প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় মোতাকাব্বির আহমেদ ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন।
অভিযোগ, তিনি নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা না করে এই সিন্ডিকেটকে বিমান টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর সুযোগ করে দেন। তদন্তে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, ঘুষ লেনদেন ও দায়িত্বে গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এসব অনিয়মের কারণেই তাঁকে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ওএসডি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রশাসনে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন মোতাকাব্বির আহমেদের বিলাসবহুল জীবনযাপন। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে দুই দফায় বিদেশ সফরে গেছেন। প্রতিবারই তাঁরা বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করেছেন। প্রতিটি সফরের আনুমানিক ব্যয় ছিল প্রায় ৩০ লাখ টাকা দুই সফর মিলিয়ে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের মার্চে তিনি সাতজন পরিবারের সদস্যকে নিয়ে সৌদি আরবে ওমরা পালনে গিয়েছিলেন। পাঁচতারকা হোটেলে অবস্থান, বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারসহ সেই সফরেও খরচ হয়েছিল প্রায় ২৮ লাখ টাকা। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী একজন উপসচিব (গ্রেড-৫) এর মূল বেতন ৪৩,০০০ থেকে ৬৯,৮৫০ টাকা। এর সঙ্গে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, পরিবহন ও অন্যান্য ভাতা যোগ হয়ে মাসিক মোট আয় দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকার মতো। অর্থাৎ একজন সরকারি কর্মকর্তার মাসিক সরকারি আয় যেখানে “সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকা”, সেখানে মোতাকাব্বির আহমেদের একেকটি বিদেশ সফরের ব্যয় ছিল প্রায় “৩০ লাখ টাকা”।
একজন জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক জনবাণীকে বলেন, “যে কর্মকর্তা মাসে এক লাখ টাকারও কম বেতন পান, তাঁর বিদেশ সফরে যদি কোটি টাকার ব্যয় হয়, তাহলে উৎসটা খুঁজে দেখা জরুরি। এটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়।”
বিজ্ঞাপন
জনপ্রশাসনে যেসব কর্মকর্তা বিতর্কিত বা অনিয়মে জড়িত, সাধারণত তাঁদেরই ওএসডি করা হয়। ফলে মোতাকাব্বির আহমেদ এখন কার্যত দায়িত্বহীন অবস্থায় রয়েছেন। প্রশাসনের ভেতরে আলোচনা চলছে দীর্ঘদিনের নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে প্রভাব খাটিয়ে এতদিন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকতে পেরেছিলেন।
এ বিষয় যোগাযোগ করা হলে মোতাকাব্বির আহমেদ দৈনিক জনবাণীকে বলেন,“আটাব থেকে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। আমাকে বাদ দেওয়ার খবরটি সঠিক নয়।”
ট্রাভেল সিন্ডিকেটের অর্থে বিদেশ সফরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,“আমি সরকারি টাকায় বিদেশে গিয়েছি।” আপনি চাইলে আমি সব তথ্য পাঠিয়ে দিবো। আমার পাসপোর্ট দেখলে বুঝবেন আমি কোন দেশে কতবার ট্যুর করেছি। সত্যি বলতে আমি আটাবের কারো সঙ্গে ব্যাক্তিগত বৈঠক করেনি। যদি কেউ বলে থাকে ভুল বলেছে।
বিজ্ঞাপন
তবে বৈঠকের বেশ কিছু ছবি জনবাণীর হাতে আসছে। সেখানে দেখা যায় নড়িয়া ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস স্বত্বাধিকারী সবুজ মুন্সী সঙ্গে একধিক বৈঠক করেছেন। কিন্তু সবুজ মুন্সী আটাব থেকে বহিস্কৃত। এ ছাড়া সবুজ মুন্সীকে বানিজ্য মন্ত্রানালয় থেকে শোকাজ করা হয়েছিলো। কালো তালিকার ট্রাভেলস এজেন্সির মালিকদের সঙ্গে মোতাকাব্বির আহমেদ ছিলো সখ্যতা।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তাঁর সফর সংক্রান্ত অফিস আদেশে ‘নিজ খরচে বিদেশ সফর’ উল্লেখ ছিল। অর্থাৎ সফরের ব্যয় সরকারি তহবিল থেকে বহন করা হয়নি।








