আমরা কোথায় কীভাবে থাকব আল্লাহই ভালো জানেন: কলোনির বাসিন্দারা

প্রতিদিনের ন্যায় আজও ঝলমলে সকাল ছিল। কলোনিতে হৈ-হুল্লোড়, রান্নাবান্না শেষে নিজ নিজ কর্মস্থলে চলে যান সবাই। তখনো কেউ জানতেন না এক মুহূর্তের ভয়াবহ আগুন কেড়ে নেবে তাদের সবটুকু।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (০১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩০মিনিট, নিস্তব্ধ কলোনিতে হঠাৎ কালো ধোঁয়া আর পোড়া গন্ধ। আশেপাশে থাকা মানুষজন খুঁজতে থাকেন আগুনের ।
হঠাৎ দাও দাও করে জ্বলে ওঠে আগুন। একে একে ছড়িয়ে পড়ে টিনশেড কলোনির সারিবদ্ধ কক্ষগুলোতে। চিৎকার করে আত্মহারা হয়ে উঠেন বাসিন্দারা। ঘরে থাকা আসবাবপত্র, সারা মাসের খাদ্য, টাকা-পয়সাসহ সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়েছে মুহূর্তের মধ্যেই। কালিয়াকৈর পৌরসভার চান্দরা পল্লীবিদ্যুৎ দিঘির পাড় এলাকার একটি টিনশেড কলোনিতে এ অগ্নিকেণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
বিজ্ঞাপন
স্কুল শিক্ষার্থী সুমাইয়া কেবলই ঘরে তালা ঝুলিয়ে বইপত্র নিয়ে যাচ্ছিল। আগুন তার কক্ষে ছড়িয়ে পড়তেই চিৎকারে করে ওঠে- ‘কে কোথায় আছো, আগুন নিভাও। আমাগো সব পুইড়া গেল। আমার বাপ মারে খবর দেও।’ এক পর্যায়ে টলমল চোখে নিরুপই হয়ে দেখতে থাকে আগুনের চিত্র। একে একে ৮০টি কক্ষে আগুন ছড়িয়ে যায়।
আগুন লেগেছে এমন খবরে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে চারটি ইউনিট সেখানে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দেড় ঘণ্টা প্রচেষ্টার পর নিয়ন্ত্রণ আসে আগুন। ততক্ষণে সর্বস্ব হারায় বাসিন্দারা।
ওই কলোনির বাসিন্দা সুমন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, আমার স্ত্রী ফোন দিয়ে বলতেছে আমাগো সব পুইড়া গেল তাড়াতাড়ি বাড়ি আহেন। অফিস ফালাইয়া আইসা দেখি সব শেষ। এক বস্তা চাউল কিনছিলাম। কিস্তিতে ফ্রিজ, কিনছিলাম কিছুই বার করবার পারি নাই।
বিজ্ঞাপন
নারী পোশাক শ্রমিক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ঘুম থেকে উঠে ঘর গুছিয়ে তালা দিয়ে ডিউটিতে গেছি। রান্না কইরা গেছে দুপুরে আইসা খাব। অফিসে গিয়েই খবর পেলাম আগুন লাগছে। আইসা দেখি মানুষ আর মানুষ। ঘরের কয়টা খুঁটি ছাড়া আর কিছুই নাই। এতোগুলা মানুষ এখন আমরা কোথায় কীভাবে থাকব আল্লাহই ভালো জানেন।
আসমা আক্তার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, কতো কষ্ট কইরা টাকা জমায়ে ঘরের কিছু জিনিস করছিলাম। কিন্তু রাখার সৌভাগ্য হলো না। পোড়া জিনিসগুলা ঘেটে দেখলাম কিছু ভালো আছে কিনা। রাইত হলে যে কই থাকুম আমরা।
বিজ্ঞাপন
কলোনির মালিক বায়জিদ হোসেন জানান, আগুনে পুরো কলোনি পুড়ে গেছে। ভাড়াটিয়াদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু কেউ আহত হননি। আমার ক্ষতি হলেও যারা এখানে বসবাস করছিলেন তাদের জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি স্থানীয়ভাবে তাদের সহায়তা কামনা করছি।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম ফখরুল হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য তিন বেলা খাবার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও প্রতিটি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে দুটি করে কম্বল আমি নিজেই সেখানে গিয়ে দিচ্ছি।








