অবহেলায় পড়ে আছে মৌলভীবাজারের বধ্যভূমি, নেই যথাযথ সংরক্ষণ

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও মৌলভীবাজার জেলার অধিকাংশ বধ্যভূমি আজও অবহেলা ও অযত্নে পড়ে আছে। জেলার কয়েকটি স্থান ছাড়া এখনো অনেক বধ্যভূমির সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। যেগুলো চিহ্নিত করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোও বছরের পর বছর ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে ঢেকে থাকে।
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধের স্মৃতি আজ অবহেলার চিহ্ন
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মৌলভীবাজার জেলার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষদের ধরে এনে বিভিন্ন স্থানে নির্মমভাবে হত্যা করে গণকবর দেয়। যুদ্ধের পর এসব হত্যাযজ্ঞের স্থান চিহ্নিত করে কিছু বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বধ্যভূমির অধিকাংশই সারা বছর অযত্নে পড়ে থাকে। মাঝে মধ্যে বিজয় দিবস সামনে রেখে পরিষ্কার করা হলেও বাকি সময় এগুলো ঝোপজঙ্গলে ভরে যায়।
বিজ্ঞাপন
২০টির মধ্যে সংরক্ষিত মাত্র ৮টি
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলায় প্রায় ২০টি বধ্যভূমি ও গণকবরের অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮টি বধ্যভূমি সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তবে সংরক্ষিত স্থানগুলোও নিয়মিত পরিচর্যার অভাবে ঝোপঝাড়ে ঢেকে থাকে। অনেক জায়গায় গরু-ছাগল ও মানুষের মল-মূত্র ত্যাগের স্থানে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা শমশেরনগর ইউনিয়নের শমশেরনগর বিমানবন্দর সংলগ্ন বধ্যভূমি, সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ, দেওড়া ছড়া বধ্যভূমি সরকারি ভাবে স্থাপনা তৈরি করা হলেও বাহির থেকে বোঝার উপায় নেই এটা একটা বধ্যভূমি। যে কেউ দেখলে মনে হবে এটা একটা ভূতের বাড়ী। ঘন জঙ্গলে ভরপুর যা সুন্দরবনকেও হার মানাবে।
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জেলার চিহ্নিত বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে রয়েছে—কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানবন্দর সংলগ্ন বধ্যভূমি ও দেওড়া ছড়া, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া গণকবর, কুলাউড়া উপজেলার হাকাতির দিঘিরপারের গণকবর ও রেলস্টেশনের দক্ষিণে রেললাইনের পূর্ব পাশের গণকবর, রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের হির নারায়ণ দাসের দিঘিরপারের গণকবর, বড়লেখা উপজেলার সায়পুর গণকবর। এছাড়া মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাড়ন্তি–নালিউড়ি সড়কের উত্তর পাশে এবং আপার কাগাবলা ইউনিয়নের নড়িয়া গ্রামের কামিনী দেবের বাড়ির দক্ষিণ পাশে অবস্থিত গণকবরসহ আরও বেশ কিছু বধ্যভূমি রয়েছে।।
জেলার মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, বধ্যভূমি গুলো হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম নির্দশন। এখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা নির্বিচারে গণহত্যা করেছে। অথচ এই স্থান গুলো এখন গরু ছাগল ও মানুষের মল-মুত্র ত্যাগের জায়গা। যা অত্যান্ত দুঃখজনক। বিজয় দিবসের আগে বধ্যভূমি গুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হোক।
মুক্তিযোদ্ধা মনু মিয়া বলেন, পঙ্গুত্ব নিয়ে এখনও বেঁচে আছি। বয়স হয়েছে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছি। শমশেরনগর বধ্যভূমিতে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে গণকবর দিয়েছে। দেওড়া ছড়ায় একসাথে প্রায় ৭০ জনকে হত্যা করে গণকবর দিয়েছে। অথচ এসব স্থান গুলো সংরক্ষণ করা হলেও কোন কদর নেই। শুধু এই দুটি নয় সারা জেলায় অনেক গণকবর ও বধ্যভূমি আছে যার চিহ্ন এখন নেই।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোসা. শাহীনা আক্তার বলেন, মৌলভীবাজার পৌরসভার একটি বধ্যভূমি বিজয় দিবসের আগে পরিষ্কার করা হয়। অন্যান্য বধ্যভূমির পরিচর্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।








