আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ১২:৩৩ অপরাহ্ন, ১লা মার্চ ২০২৪


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৪৪ জন মারা গেছেন। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২২ জনের মতো। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।


এই পরিস্থিতিতে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে।


এই ঘটনা আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স, এএনআই, এএফপি, এপি, সংবাদমাধ্যম বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, আল আরাবিয়া নিউজ, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, এনডিটিভি, আরব নিউজ এবং হিন্দুস্তান টাইমসসহ প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বসহ কারে প্রকাশ পেয়েছে।


আরও পড়ুন: শপথ নিলেন পাকিস্তানের নতুন সংসদ সদস্যরা


এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সাথে প্রচার করা হয়েছে এ অগ্নিকাণ্ডের খবর। এমনকি দুর্ঘটনার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘তাৎক্ষণিক খবর’ হিসেবে এটি প্রচার করা হয়।


বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত দশটার দিকে গ্রিন কজি কটেজ নামের একটি ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে ভবনটির নিচের দিকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে এবং পড়ে তা দ্রুত গতিতে ওপরে ছড়িয়ে পড়ে।


নিচতলায় আগুন লাগার কারণে ভবনটির ওপরের তলাগুলোতে অনেকেই আটকা পড়েন। প্রাণে বাঁচার জন্য ওপর থেকে অনেকেই লাফিয়ে পড়ে। সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন অনেকে।


প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ কেউ জানিয়েছেন, দুই বা তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে হাত পা ভেঙ্গে আহত হয়েছেন অনেকেই। তবে তারা সবাই প্রাণে বেঁচে আছেন। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় সম্পূর্ণ সিঁড়িটিই ‘অগ্নি চুল্লির’ মতো হয়ে গিয়েছিল। যার পলে কেউ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে পারেনি।


আরও পড়ুন: ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪


আর সিঁড়ি দিয়ে এক সাথে তিন জনের বেশি যাওয়া যেতো না বলেও জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, যারা নিহত হয়েছে তাদের বেশিরভাগই আগুনে পুড়ে নয়, বরং তারা আসলে ধোয়ার কারণেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। এর আগে তারা সবাই অচেতন হয়ে পড়েছিল।


ফায়ার সার্ভিস আরও জানিয়েছে, ভবনটির আগুন নেভানোর তেমন কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তবে আগুন আশপাশের কোনো ভবনে ছড়িয়ে পড়েনি।


আগুনে ৪৪ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি এই ঘটনাই কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়াও হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।


এর আগে ঘটনাস্থল থেকে ৭৫ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বলে জানানো হয়েছিল।


আরও পড়ুন: সেনেগালে নৌকা ডুবে ২৩ অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু


ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে অন্তত ৪৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, রাজধানী ঢাকায় বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে একটি রেস্তোরাঁয় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।


৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরও বেশ কয়েকজন মানুষকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। দমকল কর্মকর্তাদের মতে, দুই ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় এবং এর কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।


বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩৩ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের প্রধান বার্ন হাসপাতালে আরও অন্তত ১০ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ২২ জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক বলেও জানিয়েছেন তিনি।


সংবাদমাধ্যমটি আরও বলছে, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ড বেশ সাধারণ ঘটনা। এসব অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রায়ই নিম্ন মানের নিরাপত্তা সচেতনতা এবং আইনের অপর্যাপ্ত প্রয়োগকে দায়ী করা হয়ে থাকে।


আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় ১৩৪ বাংলাদেশিসহ ২৩২ অভিবাসী গ্রেফতার


বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একটি ছয় তলা বিল্ডিংয়ে রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৪৩ জন মারা গেছেন এবং আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।


বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকার বেইলি রোডের একটি জনপ্রিয় বিরিয়ানি রেস্তোরাঁয় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সেই আগুন অন্যান্য ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


এই অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্বজনরা শুক্রবার ভোরেই প্রিয়জনের মরদেহ গ্রহণের জন্য হাসপাতালে ভিড় জমাতে থাকেন এবং অনেককে জরুরি বিভাগের বাইরে শোক করতেও দেখা গেছে।


ভযাবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার এই বিল্ডিংটিতে অনেক মানুষ শিশুসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে খাবার খাচ্ছিল। এই ভবনে বেশিরভাগই রেস্তোরাঁ এবং বেশ কয়েকটি পোশাক এবং মোবাইলের দোকান রয়েছে। যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই শ্বাসরোধে মারা গেছেন এবং কেউ কেউ ভবন থেকে লাফ দেওয়ার কারণে নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।


আরও পড়ুন: কারাগারে বসেই এবার ঘুষের দায়ে অভিযুক্ত ইমরান ও তার স্ত্রী


রয়টার্স বলছে, ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশ সাধারণ বিষয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এখন নতুন ভবনেও বৃদ্ধি পেয়েছে, মূলত এসব ভবন প্রায়ই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই নির্মিত হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার, এয়ার কন্ডিশনার এবং দুর্বল বৈদ্যুতিক তারের কারণে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।


এর আগে ২০২১ সালের জুলাই মাসে ঢাকার বাইরে একটি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শিশুসহ অন্তত ৫৪ জন প্রাণ হারান। এছাড়াও ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার একটি শতাব্দী প্রাচীন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৭০ জন প্রাণ হারিয়েছে।


অনেকটা একই ধরনের খবর প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), সিএনএন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি, এএনআই, সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান, আরব নিউজ, দ্য হিন্দু, আল আরাবিয়া নিউজ, হিন্দুস্তান টাইমস-সহ আরও অনেক সংবাদমাধ্যম।


এমএল/