সাকিব-মুস্তাফিজের ম্যাজিকে বাংলাদেশের শ্বাসরুদ্ধকর জয়


Janobani

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:৪৪ অপরাহ্ন, ১০ই মে ২০২৪


সাকিব-মুস্তাফিজের ম্যাজিকে বাংলাদেশের শ্বাসরুদ্ধকর জয়
ছবি: সংগৃহীত

মিরপুরে লম্বা সময় পর ফিরে এসেছে টাইগাররা। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে সাদা বলের ক্রিকেট জাতীয় দল খেলেনি। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ ফিরল নিজেদের চিরচেনা সেই মাঠে। লম্বা বিরতি নিয়ে ফেরায় স্বস্তির এক জয়ও এসেছে বটে। তবে রেখে গিয়েছে বেশকিছু প্রশ্ন। চলমান সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমবার দেখা গেল প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ এক ম্যাচ। ব্যাটারদের ব্যর্থতার পর বোলারদের কল্যাণে সিরিজে টানা চতুর্থ জয় তুলে নিয়েছে শান্ত বাহিনী। 


বাংলাদেশের দেয়া ১৪৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং খুব একটা খারাপ হয়নি। তবে স্বাগতিক বোলাররাই বরং উপহার দিয়েছেন বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং। তাতে জিম্বাবুয়ে লক্ষ্যের খুব কাছে গিয়ে থেমেছে আরও একবার। তাসকিন-সাকিব-মুস্তাফিজদের আঁটসাঁট বোলিংয়ের সুবাদে ১৩৮ রানে শেষ হয়েছে সফরকারীদের ব্যাটিং ইনিংস। চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৫ রানে। 


শেষ ওভারে ব্লেসিং মুজারাবানির সামনে যখন দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বোলিংয়ে এসেছেন, তখনও ছিল শঙ্কা। একটা ছয় খেয়ে সেই শঙ্কা আরও বাড়ালেন এই বোলার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিতল সাকিবের অভিজ্ঞতায়। আগ্রাসী মুজারাবানিকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেছেন এই তারকা। পরের বলেই বোল্ড করেছেন রিচার্ড এনগারাভাকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতল বেশ কঠিন করেই। 


আরও পড়ুন: টাইগারদের ব্যাটিং ইনিংসে ধস, প্রতিপক্ষকে দিল মামুলি টার্গেট


যদিও বাংলাদেশের জন্য আজ ম্যাচ এতোটা কঠিন নাও হতে পারত। ব্যাটিং ইউনিট এদিন দেখিয়েছে ব্যর্থতার পুরনো সেই চিত্র। ১০১ রানের ওপেনিং জুটি দিয়ে বাংলাদেশকে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন তানজিদ হাসান তামিম এবং সৌম্য সরকার। দারুণ ফিফটি পেয়েছিলেন ওপেনার তামিম। কিন্তু ব্যক্তিগত ৫২ রানে তার বিদায়ের পর ধ্বংসের প্রথম শুরু। তাওহীদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, নাজমুল শান্ত কিংবা জাকের আলী-রিশাদ হোসেন কেউই পাননি এদিন রানের দেখা। ৪২ রানের ব্যবধানে ১০ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪৩ রানেই। 


১৪৪ রানের লক্ষ্যমাত্রায় খেলতে নেমে জিম্বাবুয়েও খুব ভাল শুরু পায়নি। ইনিংসের চতুর্থ বলেই বেনেটকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছিলেন স্পিড স্টার তাসকিন। স্বল্প পুঁজির রানকে ডিফেন্ড করতে ঠিক এমন একটা শুরুই দরকার ছিল বাংলাদেশের বোলারদের। এরপর খানিক চাপেই পড়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। আরেক ওপেনার মারুমানি এবং সিকান্দার রাজা কিছুটা শাসনই করেছিলেন বাংলাদেশের বোলারদের। সেখান থেকেও মুক্তি দেন তাসকিনই। দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন অধিনায়ক রাজাকে।


এরপরে ১৩ বলে ১৪ রান করা মারুমানিকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন সাকিব আল হাসান। সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে হয়নি। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়েছিল ব্যাটার। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদল হয়নি। পরের বলেই ক্লাইভ মাদান্দের বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেছিলেন সাকিব নিজে। আম্পায়ার নাকচ করে দেওয়ায় এবার রিভিউ নেয় বাংলাদেশ দল। এবারেও সিদ্ধান্তের কোনো বদল হয়নি। 


আরও পড়ুন: ৩ পরিবর্তন নিয়ে ব্যাটিংয়ে সাকিব-শান্তরা


দশম ওভারে অবশ্য ঠিকই ফিরে যান মাদান্দে। লেগ স্পিনার রিশাদের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই এলবিডব্লিউ আউট হয়েই ফিরেছেন মাত্র ১২ রান করে। তাতে ২৫ রানের জুটি ভাঙে জিম্বাবুয়ের। চার উইকেট নিয়ে বাংলাদেশও খানিক আশা দেখতে থাকে খেলায় ফেরার। কিন্তু রায়ান বার্ল এবং জোনাথন ক্যাম্পবেল ছিলেন অবিচল। ৩০ বলে ৩৫ রানের জুটি গড়ে জিম্বাবুকে ঠিকই রেখেছিলেন ম্যাচের কক্ষপথে। 


১৫তম ওভারে মুস্তাফিজ দেখালেন নিজের ম্যাজিক। আইপিএলে যে ছন্দ রেখে এসেছিলেন, আর সেটাই বাংলাদেশের জার্সিতে টেনে আনলেন। তার ওভারে সফরকারীদের দুই উইকেট নেই। বার্ল এবং লুক জংওয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ দল। এক ওভার বিরতি দিয়েই সাকিবের দ্বিতীয় আঘাত। জিম্বাবুয়ের বড় ভরসা ক্যাম্পবেল ক্যাচ দিলেন অধিনায়ক শান্তকে। 


ফারাজ আকরাম খানিক দেখেশুনেই খেলছিলেন বলের সাথে তাল মিলিয়ে। মুস্তাফিজের বলে বড় শট নিতে গিয়ে ভুল করেছেন টাইমিংয়ে। দুর্দান্ত এক ক্যাচে তাকে সাজঘরে ফেরান তানজিদ হাসান তামিম। এরপর বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা বাড়ান ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। তানজিম সাকিবের এক ওভারে দুই ছক্কা মেরে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়েছিলেন এই ব্যাটার। তবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে দলকে জয় এনে দেন সাকিব আল হাসান। ২৯৯ দিন পর টি-টোয়েন্টিতে ফিরে শিকার করেছেন ৪ উইকেট। 


এমএল/