একদিকে আলোচনা, অন্যদিকে গ্রেফতার-গুলি এটা কোন খেলা : ফারুকী


Janobani

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:৩৩ অপরাহ্ন, ৩১শে জুলাই ২০২৪


একদিকে আলোচনা, অন্যদিকে গ্রেফতার-গুলি এটা কোন খেলা : ফারুকী
ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে দেশজুড়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে সরব ছিলেন দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্ট্যাটাসে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এই নির্মাতা। 


তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাতে আন্দোলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন ফারুকী। ফেসবুকে সরকারের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন জুড়ে দিলেন তিনি।


ফারুকীর কথায়, ‘কোটা তো মেনে নিছে। এখন কিসের আন্দোলন? এই প্রশ্ন যাদের মনে আসছে তাদের জন্য একটু বুঝায়ে বলি, আমি যদ্দুর বুঝতে পারছি আর কি! এই আন্দোলনটা তাচ্ছিল্য এবং বল প্রয়োগ করে থামাতে যেয়ে সরকার প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে। যে বাক্সে জমা ছিল অনেক প্রশ্ন, অনেক আগ থেকেই। এই প্রজন্ম সেই প্রশ্নগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। তার মধ্যে একটা বড় প্রশ্ন, নাগরিকের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক কি হবে? প্রভু-দাসের নাকি সেবক- মালিকের? একদিনে এত জন দাস মেরে ফেললে তো দাস বিদ্রোহ হয়ে যেত? স্বাধীন দেশে দেশের মালিক জনগনকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যে পাবলিক সারভেন্টদের নিয়োগ দেওয়া হলো, তারা আমাদের এতগুলো মানুষকে মেরে ফেলল?’


আরও পড়ুন: ‘আওয়াজ উডা বাংলাদেশ’ গানের শিল্পী র‍্যাপার হান্নান রিমান্ডে


তিনি আরও বলেন, ‘যারা এতগুলো খুনের সঙ্গে জড়িত, যারা হুকুমের আসামী তাদের শাস্তি হবে কবে? একদিকে আলোচনা আর অন্যদিকে প্রেপ্তার-গুলি এটা কোন খেলা? এটা কখন বন্ধ হবে? প্রশ্ন আরো উঠেছে, সরকারে যারা যায় তারা জনগনের সঙ্গে দম্ভ আর অহমিকা নিয়ে অপমান করে কথা বলবে? নাকি রেসপেক্ট নিয়ে কথা বলবে?’


দেশের গণতন্ত্র নিয়ে এই নির্মাতা বলেন, ‘জনগন সরকারকে ব্যঙ্গ করবে, অপমান করবে, তীব্র সমালোচনায় ছিলে ফেলবে। শিল্পী স্বাধীন ভাবে গান বানাবে, ফিল্ম বানাবে, কারো মেপে দেওয়া স্বাধীনতা নিয়ে তাকে চলতে হবে না। এই সবই গণতন্ত্রের অংশ। সরকারে যেই থাকুক তাকে বিনয়ের সঙ্গে এগুলো গ্রহণ করতে হবে, এটাই গণতান্ত্রিক সমাজের রীতি। সরকার কি আদৌ এই রীতি মানার জন্য মানসিক ভাবে তৈরি? নাকি সরকার বুলেট-ধমক-গ্রেপ্তারের ভাষায় কথা বলবে?’


তিনি আরও বলেন, ‘শেষে আরেকটা উপলব্ধি বলি, এই আন্দোলনের চরিত্র যারা এখনো বুঝতে পারেন নাই, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, এই আন্দোলনে কারা আছে তাদের পরিচয় দেখেন। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, ইংলিশ মিডিয়াম-বাংলা মিডিয়াম-আরবী বিভাগ সব এসে এক কাতারে হাজির। এদের দাবী “ন্যায়বিচার আর মর্যাদা”! কার রাজনৈতিক বিশ্বাস কি সেটা বিবেচনায় নিয়া এরা আন্দোলনে নামে নাই। ফলে ওইসব পুরানা দিনের বাইনারি দিয়া এদের ভাগ করতে পারবেন না, এদের বুঝতে পারবেন না।’


আরও পড়ুন: চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ


সবশেষে ফারুকী লেখেন, ‘এইটুকু বলতে পারি, এই আন্দোলন কোনো ছেলে ভোলানো ছড়া বা নাটক দিয়ে থামানো যাবে না। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়েই এই আন্দোলন থামবে। গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরির ক্ষেত্র তৈরি না করে, ব্যারাকে ফিরে গেলে আমাদেরকে আরেকটা ব্যর্থ বিপ্লবের মোয়া হাতে নিয়েই ঘুমাতে হবে। তবে আমার বিশ্বাস এই আন্দোলন আমাদেরকে একটা স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক সমাজে উত্তরণের রাস্তা দেখাবে। কেন এই বিশ্বাস? কারণ মানুষের এত স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ এর আগে আমি দেখি নাই। একটা উদাহরন দেই। এক ছাত্রকে আটকের পর কোর্টে হাজির করা হইছে। পেছন পেছন তার মা দৌড়ে এসে ছেলের পাশে দাঁড়ায়ে ছেলের বুকে সজোরে থাম্প দিয়ে বলে, “টেনশন করিস না”! এই অভয় পরাভব মানবে না।’


জেবি/আজুবা