অর্ধকোটি বেতন পেয়েও ব্যর্থ ক্রিকেটাররা, বেতন বকেয়া থাকা সাবিনারা চ্যাম্পিয়ন
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪৪ অপরাহ্ন, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪
পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই দিয়ে রবিবার (২০ অক্টোবর) সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। তার একদিন পরই ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে নেমেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। বিমানবন্দরে দেওয়া হয়েছে জমকালো সংবর্ধনা। একই দিনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাজেভাবে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে টাইগাররা। এই হলো বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল ও নারী ফুটবল দলের বর্তমান চিত্র।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কেন্দ্রীয় চুক্তির অধীনে ক্রিকেটারদের মাসিক বেতন দেয়। এতে বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আয় করে থাকেন অধিকাংশ ক্রিকেটাররা। নিয়মিত বেতনের পাশাপাশি রয়েছে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি টোয়েন্টির জন্য আলাদা আলাদা ম্যাচ ফি।
আরও পড়ুন: টানা তিন সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগাররা
এ ছাড়া বিদেশি কোচিং স্টাফ ও আধুনিক সরঞ্জামাদির পাশাপাশি অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা তো আছেই। এত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স গড়পড়তা।
পাকিস্তানের মাটিতে তাদের হোয়াইটওয়াশ করে বড় দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মাত্র দুই মাসের মধ্যেই পরপর তিনটি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ভারতের মাটিতে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির পর ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে ধবলধোলাই হওয়ার তেতো স্বাদ পেয়েছে শান্ত-মিরাজরা।
মিরপুরে টেস্টে বড় ব্যবধানে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রামে পা রেখেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু বাংলাদেশ দল মিরপুরের থেকে আরও বাজেভাবে হারের স্বাদ পেয়েছে বন্দরনগরীতে। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে ইনিংস এবং ২৭৩ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে প্রোটিয়ারা। এতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে সফরকারীরা।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ছাড়াও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে এখনও সাফল্য খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। শিরোপা জয় তো দূরের কথা বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি শান্ত-লিটনরা। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার দুর্দান্ত সুযোগও হাতছাঁড়া করেছে তারা।
উল্টো চিত্র বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে। ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশের টাইগ্রেসরা। কষ্টের দিন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো আরও সংগ্রাম করতে হয়েছে নারী ফুটবল দলের মেয়েরা। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর বেতন বৃদ্ধি হলেও সেটা এখনো অনিয়মিত।
আরও পড়ুন: বিমানবন্দর থেকে বাফুফের পথে সাফজয়ীরা
২০২৩ সালের এপ্রিলে ২০ লাখ টাকার অভাবে অলিম্পিকের বাছাইপর্ব খেলতে মিয়ানমারে যেতে পারেনি নারী ফুটবল দল। যার কারণে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল বাফুফেকে। তারপরও ফুটবলারদের বেতন নিয়মিত দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
দুই-তিন মাস পর এক মাসের বেতন পেয়েছেন সাবিনা, কৃষ্ণা ও সানজিদারা। প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে পান নারী ফুটবলাররা। বাফুফে নতুন চুক্তিতে একাদশে থাকলে ১০ হাজার টাকা ম্যাচ ফি নির্ধারণ করেছে। সেই ফিও থাকে বকেয়া।
একদিকে যেমন বেতন নেই, তেমনি দেশের বাইরে ম্যাচ খেলার সুযোগও খুব বেশি পায় না নারী ফুটবলাররা। বাফুফে অনেক সময় প্রীতি ম্যাচের জন্য দল ঠিক করে। পরে বিভিন্ন কারণে সেই দল আসতে পারে না অথবা সাবিনাদের যাওয়া হয় না। আবার অনেক সময় অর্থের অভাবে বাফুফে সাবিনাদের খেলা আয়োজন করে দিতে পারে না।
গত বছর জমকালো আয়োজনে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছিল বাফুফে। সেই লিগের জন্য বাইরের দেশে খেলার অনুমতি পায়নি কয়েকজন নারী ফুটবলার। কিন্তু লিগ মাঠে না গড়ানোতে এতে আরও হতাশ হয়ে পড়েন ফুটবলাররা। তারপরও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেরাটা দিয়েছেন সাবিনারা।
২০১৬ সাল থেকে বাফুফে ভবনে থাকেন নারী ফুটবালরা। সানজিদা-কৃষ্ণাদের মাধ্যমে শুরু হওয়া সেই ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন অনেক নতুনরা। বাফুফে ভবনের চার তলায় কয়েকটি কক্ষে অনেক সময় ৭০ জন ফুটবলার থাকেন। এক রুমে ৬-৭ জনও থাকতে হয়। নারী ফুটবল দলে আবাসনও একটা বড় সমস্যা।
আরও পড়ুন: ঢাকায় পৌঁছেছেন সাফজয়ী চ্যাম্পিয়নরা, যে পথ দিয়ে যাবে ছাদখোলা বাস
গত দেড় বছরের মধ্যে নারী দলে কোচ পরিবর্তন হয়েছে কয়েকবার। নারী দলে ছোটন হেড কোচ থাকলেও মূল চাবিকাঠি ছিলেন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। ছোটন ও স্মলি চলে যাওয়ার পর সাইফুল বারী টিটু সাবিনাদের কোচ হন।
বাফুফে কয়েক মাস পর টিটুকে বদলে ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারকে আনেন নারীদের দায়িত্বে। নতুন কোচ, নতুন তত্ত্ব। চাইনিজ তাইপে এবং ভুটানের বিপক্ষে সেই তত্ত্বের প্রয়োগ করেছিলেন বাটলার। এতে সিনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়।
সদ্য শেষ হওয়া সাফ টুর্নামেন্টে যা প্রকাশ্যে আসে। কোচের সঙ্গে দূরত্ব থাকলেও মাঠে ঠিকই শতভাগ দিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। যার ফলে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
এমএল/