জুড়ীতে অনলাইনে কেক বিক্রি করে স্বাবলম্বী দুই বোন
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:৪৪ অপরাহ্ন, ১১ই নভেম্বর ২০২৪
হোসাইন রুমেল, জুড়ী: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের জাবেদ ইয়াসমিন লাবনী ও আবিদা ইয়াসমিন মীম। বড় বোন লাবনী পড়াশোনা শেষ করে ঘরে বসে শখের কাজটাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে কেক বিক্রয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বড় বোনের কাজে নিজেকে জড়িয়ে কেক বানাতে পারদর্শী হয়ে উঠেন ছোট বোন মিম। নিজেদের হাতে বানানো কেক বিক্রি করে ইতিমধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন তারা।
দুইজন নারী উদ্যোক্তা লাবনী ও মীম জানান, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে তারা শুরু করেন এই ব্যবসা। তখন হঠাৎ তাদের মাথায় চিন্তা এলো নিজ থেকে কিছু একটা করার। এ সময় অনেকটা শখের বসে কেক বানানো শুরু করে তারা। পরে পরিবারের সদস্যরা কেকের প্রশংসা করলে কেক বানানোর প্রতি উৎসাহ আরো বেড়ে যায় তাদের। লাবনী বলেন, হঠাৎ এক দিন আমার এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে কেক বানানোর ফরমায়েশ পাই। সেদিন চমৎকার কেক তৈরি করে চমক লাগিয়ে দিই। কেক খেয়ে প্রতিবেশীরা কেকের প্রশংসা করলেন এবং টাকা দিলেন। এই কেক বিক্রির টাকা এবং আমার জমানো কিছু টাকা দিয়ে কেক তৈরির সরঞ্জাম কিনি। আমি অবসর সময়ে ইউটিউব দেখে এবং অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করে কেক বানানো শিখেছি। আমার বানানো প্রথম অর্ডারের কেকটি এতটাই সুস্বাদু হয়েছিল যে যারা খেয়েছেন তারা সবাই এর প্রশংসা করেছেন। ধীরে ধীরে কেকের সুনাম ছড়িয়ে পড়ার পর আমার নিজ ইউনিয়ন ফুলতলা ও জুড়ী উপজলা থেকেও কেকের জন্য ফরমায়েশ আসতে লাগল। এভাবে ২০২৩ সালে এসে পুরোদমে অনলাইন এবং অফলাইনে হরেক রকমের কেকের অর্ডার পেতে লাগলাম এবং সফলভাবে তা তৈরি করে আমি স্বাবলম্বী হতে লাগলাম।
আরও পড়ুন: গোয়াইনঘাটে হাইড্রোলজি নিয়ে মাস্টারপ্লানের প্রয়োজন
কোন ধরনের কেক বানাতে পারদর্শী এই বিষয়ে জানতে চাইলে ছোট বোন মীম জানান, তারা বিভিন্ন প্রকারের কেক তৈরি করতে পারেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চকলেট, ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি, লেমন, অরেঞ্জ, বাটার কচ, পানদান ফ্লেভারের বিভিন্ন ডিজাইনের কেক বেশি তৈরি করেন। তা ছাড়া ছোট বাচ্চাদের জন্মদিনের ডল কেক, ডোরিমন, কার কেকসহ বিভিন্ন কার্টুনের কেক বানাতে পারদর্শী তিনি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তারা ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী হুবহু ডিজাইন-সংবলিত কেক তৈরি করে চমক লাগিয়ে দিতে পারেন। এখন পর্যন্ত প্রায় দশটিরও অধিক ভিন্ন ডিজাইন ও ফ্লেভারের কেক তৈরির হাতেখড়ি অর্জন করেছেন তারা। মীম এইচএসসি সমাপ্ত করেছেন উপজেলার শাহ নিমাত্রা ডিগ্রি কলেজ থেকে। মূলত কলেজে পড়াকালীন সময়ে ধীরে ধীরে অনলাইন ব্যবসা ও কেক তৈরির প্রতি আগ্রহের সঞ্চার হয় তার মধ্যে।
অনলাইন প্ল্যাটফরমে কেকের ব্যবসা শুরু আগে ও পরে লাবনী ও মীম হয়েছেন ছোটখাটো নানা বাধার সম্মুখীন। উদ্যোক্তা জীবনের ব্যবসা শুরুর পর অন্তত ৪-৫ জনকে শিখিয়েছেন কেক তৈরির প্রক্রিয়া। গতানুগতিক ব্যবসা সম্প্রসারণ ধারণার বাইরে গিয়ে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতা সন্তুষ্টিকে। ক্রেতাদের সুবিধা-অসুবিধা নানা বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে এগিয়ে যাওয়া লাবনী ও মীমের স্বপ্ন কতটুকু সফলতার দেখা পাবে, তা পরিমাপ করে বলা না গেলেও তারা যে দুইজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সেরা হয়ে উঠবেন ক্রমেই, সেটি হয়তো সময়ই বলে দেবে।
আরও পড়ুন: অবশেষে শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুল হকের বদলি
বর্তমানে তাদের একটি নিজস্ব অনলাইন ব্যবসার ফেসবুক পেজ রয়েছে। যার নাম Fanchi Homemake Cake পেইজটি থেকে তারা কেক বিক্রির জন্য অনেক ফরমায়েশ পান। তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার পেছনে যাদের অবদান অনেক বেশি- বিশেষ করে তাদের বাবা আব্দুল নূর ও মা সাহেদা বেগম-সহ পরিবারের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আরএক্স/