শ্রীপুরে অটো চালককে হত্যার অভিযোগে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৫৩ অপরাহ্ন, ৪ঠা মার্চ ২০২৫


শ্রীপুরে অটো চালককে হত্যার অভিযোগে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ
ছবি: প্রতিনিধি

গাজীপুরের নতুন বাজার এলাকায় তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে তুলে নিয়ে অটোরিকশাচালক লিটন মিয়াকে (৩৫) হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যার ঘটনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চার ঘন্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকেরা। নিহতের স্ত্রী সুরমিন বেগম এবং প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল লতিফ এ অভিযোগ করেন।


আরও পড়ুন: শ্রীপুরে বিএনপির সভাপতি শোকজ


মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত চার ঘন্টা তারা মহাসড়কের নতুন বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে সড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হলে দুর্ভোগে সৃষ্টি হয়। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রী, চালক ও সকালে কর্মস্থলে যাওয়া আশপাশের পোশাক শ্রমিকেরা।


নিহত অটোরিকশা চালক লিটন মিয়া নেত্রকোনার মদন উপজেলার শিবভাষা গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে। সে স্ত্রীকে নিয়ে মেম্বারবাড়ী (শিরিরচালা) এলাকার আনোয়ার হোসেনের বাড়ীতে ভাড়া থেকে পাঁচ বছর যাবত অটোরিকশা চালায়। তার স্ত্রী স্থানীয় বাঘের বাজার এলাকায় মন্ডল গার্মেন্টস পোশাক কারখানায় চাকরি করে।


মহাসড়কে অটোরিক্সা রেখে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন অটোরিকশা চালকেরা। অনেক যাত্রী যানবাহন থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। পবিত্র রমজানের শুরুতেই সড়ক অবরোধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের লোকজন।


এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে গাজীপুর জজ আদালতের আইনজীবি ইসমাইল হোসেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাকওয়া পরিবহনের বাসগুলো সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। শুনেছি গতকাল রাতে এক অটোরিকশা চালককে তাকওয়া পরিবহন থেকে ধাক্কা দিয়ে সড়কে ফেলে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে।


ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা এলাকার এক পোশাক কারখানার কর্মকর্তা তাহাজ্জদ হোসেন বলেন, এটা অন্যভাবেও সমাধান করতে পারত শ্রমিকেরা। বারবার দেখছি শ্রমিকদের সঙ্গে কিছু একটা হলেই তারা জনগণকে জিম্মি করে, সড়ক বন্ধ করে দেয়। এতে রোজার মধ্যে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এটা মগের মুল্লুক, কিছু হলেই সড়ক অবরোধ।


ক্ষুব্ধ কয়েকজন যাত্রী বলেন, ঘর থেকে বের হলেই মাথায় টেনশন থাকে সড়কের কোথায় যেন অবরোধ শুরু হয়ে গেলো। প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহাসড়ক অবেরাধের ঘটনা ঘটছে। যানবাহনে কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে তো কোনো আন্দোলন হতে পারে না। এ ধরনের আন্দোলন তুলে নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই। প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা অটোরিকশা চালকেরা সড়ক অবেরাধ করে রেখেছে।


প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, সোমবার (৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে আমি মহাসড়কের পাশেই নতুন বাজারে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাকওয়া পরিবহনের একটি বাস থেকে অটোরিকশা চালক লিটন মিয়াকে বাসেই হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করে নতুন বাজার এলাকায় ফেলে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ চালক জনিকে আটকসহ তাকওয়া (মিনি বাস) পরিবহন জব্দ করে।


অটোরিক্সা চালক হাসমত আলী এবং দুলাল মিয়াসহ অন্যান্যরা অভিযোগ করেন, অটোরিকশা চালক লিটন মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে বাসেই হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। তবে দাবী করেন এ সড়ক দিয়ে তাকওয়া পরিবহন চালাচল করতে পারবে না।


শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন) নয়ন কর বলেন, বিক্ষোভকারীদের দাবী ছিল অটোরিকশা চালককে হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলা রুজু করতে হবে। পরে তাদেরকে হত্যা মামলা রুজুর কাগজ দেখালে বেলা সাড়ে ১১ টায় তারা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভবিক হয়।


আরও পড়ুন: শ্রীপুরে নকল ব্যাটারির পানির কারখানায় ভয়াবহ প্রতারণা


প্রসঙ্গত, সোমবার (৩ মার্চ) মহাসড়কের মাষ্টারবাড়ী এলাকায় সড়কের পাশে লিটনের অটোরিকশা পার্কিং করা ছিল। তাকওয়া পরিবহন তার রিকশার লুকিং গ্লাস ভেঙ্গে ফেলায় ওই পরিবহনের শ্রমিকদের সাথে তার তর্ক হলে অটো চালককে তাকওয়া পরিবহনে তুলে নেয়। পরে তার হাতে পায়ের রগ কেটে মহাসড়কের নতুন বাজার এলাকায় ফেলে দেয়।


এসডি/