সুমুদ ফ্লোটিয়া বহরের ২ জাহাজ ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উদ্দেশ্যে ত্রাণ সরবরাহ করতে যাওয়া আন্তর্জাতিক নৌবহর সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, তাদের জাহাজগুলোকে ঘিরে ইসরায়েলি নৌযানগুলো ‘‘বিপজ্জনক ও ভীতিকর আচরণ’’ করছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১ অক্টোবর) গাজা উপকূল থেকে ১১৮ মাইল দূরে অবস্থানকালে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর আগে ইসরায়েল হুমকি দিয়েছিল, বহরটি গাজার দিকে অগ্রসর হলে তা ডুবিয়ে দেওয়া হবে।
গাজা অভিমুখী এই মিশনের আয়োজকরা বলেছেন, ইসরায়েলি দুটি ‘‘যুদ্ধজাহাজ’’ দ্রুতগতিতে এসে বহরের দুই জাহাজ আলমা ও সিরিয়াসকে ঘিরে ফেলে। এ সময় সব ধরনের নেভিগেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে যায়। জাহাজে অবস্থানরত আয়োজক থিয়াগো আভিলা এক সংবাদ সম্মেলনে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচলের ঘটনাকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ‘‘সাইবার হামলা’’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, আন্তর্জাতিক ওই নৌবহরের কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় সচল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনও সাড়া দেননি।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নামের এই নৌবহরে ৪০টিরও বেশি বেসামরিক নৌকা ও জাহাজ রয়েছে। এসব নৌযানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০০ জন নাগরিক রয়েছে। তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন।
• বিপজ্জনক আচরণ ও ড্রোন হামলা
বিজ্ঞাপন
গাজায় খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিতে ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙার সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে সুমুদ ফ্লোটিয়া ওই উপত্যকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে নৌবহরটি গাজা উপকূল থেকে ১১৮ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে। এই নৌবহরের গাজা উপকূলে নোঙর ঠেকাতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবাহিনী টহল শুরু করেছে।
সুমুদ ফ্লোটিলা বহরটির বৃহস্পতিবার সকালের দিকে গাজায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। যদি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর জাহাজের বহরকে ঠেকানোর হুমকি দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহর বলেছে, ইসরায়েলের আগ্রাসী কার্যক্রম ৪০টিরও বেশি দেশের নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। বিবৃতিতে গাজার উদ্দেশে নৌবহরের যাত্রা অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে ফ্লোটিলা।
বিজ্ঞাপন
তবে নৌবহরের কাছে আসা জাহাজগুলো কারা পরিচালনা করছে তা স্পষ্ট নয়। সুমুদ ফ্লোটিলা বহরের ইনস্টাগ্রাম পেজে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, সশস্ত্র একটি সামরিক জাহাজ বেসামরিক নৌকাগুলোর কাছাকাছি অবস্থান করছে।
ওই ভিডিওটি বহরের ‘সিরিয়াস’ জাহাজ থেকেই ধারণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। তবে ভিডিওতে দেখা অন্য জাহাজটির পরিচয় কিংবা ভিডিওটি কবে ধারণ করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকবার ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে গাজা অভিমুখী ওই নৌবহর। ড্রোনগুলো জাহাজের ওপর স্টান গ্রেনেড ও চুলকানি সৃষ্টিকারী গুঁড়া নিক্ষেপ করেছিল। এতে ক্ষয়ক্ষতি হলেও হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
বিজ্ঞাপন
গত কয়েক দিনে বহরটি কয়েকবার ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে। ড্রোনগুলো জাহাজের ওপর স্টান গ্রেনেড ও ক্ষুদ্র বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছিল। তবে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তারা নৌবহরের গাজা উপকূলে যাত্রা আটকাতে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেবে। ইসরায়েলি সেনারা উপকূলীয় এলাকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে, তাই উপত্যকায় নৌ অবরোধ বৈধ বলে দাবি করছে।
ইতালি ও স্পেন মানবিক কার্যক্রমের জন্য নৌবহরে নৌযান মোতায়েন করেছে, তবে সামরিক সংঘাতে জড়াবে না। তুরস্কও ড্রোনের মাধ্যমে বহরের গতিবিধি নজরদারি করছে।
বিজ্ঞাপন
তবে ইতালি ও স্পেন বলেছে, গাজা উপকূল থেকে ১৫০ নটিক্যাল মাইল (২৭৮ কিলোমিটার) দূরে পৌঁছালে নিরাপত্তার কারণে তারা বহরটির অনুসরণ বন্ধ করে দেবে।
• মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টা
বিজ্ঞাপন
বুধবার নৌবহরের আয়োজকদের সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি অধিকার বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেন, নৌবহর আটকানো হলে তা আন্তর্জাতিক আইন ও সমুদ্র আইনের আরেকটি লঙ্ঘন হবে। কারণ গাজার জলসীমায় ইসরায়েলের আইনি কোনও এখতিয়ার নেই।
২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরায়েল সেখানে নৌ অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। এর আগে বহুবার কর্মীরা সমুদ্রপথে গাজায় সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে।
২০১০ সালে এ ধরনের এক ঘটনায় ইসরায়েলি সৈন্যরা ছয়টি জাহাজের নৌবহরে হামলা চালায়। এতে ৫০টি দেশের ৭০০ জন ফিলিস্তিনপন্থী কর্মীর মধ্যে অন্তত ৯ জন নিহত হন।
বিজ্ঞাপন
চলতি বছরের জুনে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্যোগে গাজা অভিমুখী ছোট নৌবহর থেকে গ্রেটা থুনবার্গসহ অন্তত ১১ জনকে আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী।
সূত্র: রয়টার্স।